রোজার উপকারিতা, রোজাদারের করণীয় ও বর্জনীয় এবং রোজা ভঙ্গের কারণ
মো.আবু রায়হানঃমাহে রমজান সমাগত ।বছর ঘুরে আবার আমাদের দ্বারে হাজির হয়েছে পুণ্যময় এই মাস।রোজাদার যাবতীয় কটু বাক্য, ঝগড়া-ঝাটি, খারাপ আচরণ, মানুষ ঠকানো, ঘুষ-দূর্ণীতি, চুরি, পরনিন্দাসহ সকল প্রকার রিপুর তাড়নামুক্ত থাকার চেষ্টা করে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, "পাঁচটি বিষয় রোজাদারের রোজা বিনষ্ট করে দেয়- মিথ্যা বলা, কুটনামি করা, পশ্চাতে পরনিন্দা করা, মিথ্যা শপথ করা এবং খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো।"
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা-প্রতারণা ও গোনাহের কাজ ত্যাগ করে না আল্লাহ তায়ালার নিকট তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই।’ (বোখারি)।রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, "রোজার দিনে কেউ তোমার সঙ্গে ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে উদ্দ্যত হলে অথবা গালমন্দ করলে তাকে দুবার বলো আমি রোজাদার"(বোখারি শরীফ)।
রোজার কিছু মর্যাদা ও উপকারিতা রয়েছে -যেমন,১) জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল
২) জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায়
এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ
৩) গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম
৪) রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে।
৫) রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন।
৬) রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়
৭) রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে
৮) সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে
৯) এটি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত গোপন ইবাদত।
তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়।
১০) আল্লাহর ইবাদতের এক অভূতপূর্ব ট্রেনিং স্বরুপ।
হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যখন কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, তখন যেন সে অশালীন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকে ও উচ্চ আওয়াজে শোরগোল বা গণ্ডগোল না করে।’ (বোখারি)।শুধুমাত্র উপোস ও কামাচারমুক্ত থাকলে রোজার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করা যায় না। সঠিকভাবে রোজা পালনের জন্য আত্মশুদ্ধির পথ অন্বেষণ করা প্রয়োজন।
রমজান মাসের ফজিলত অর্জন করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেসব নিম্নে উপস্থাপন করা হল-
১. বিলম্বে ইফতার করা২. সাহরি না খাওয়া
৩. শেষের দশ দিন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা
৪. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
৫. বেশি বেশি খাওয়া
৬. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
৭. জামাতের সাথে ফরজ নানাজ আদায়ে অলসতা করা
৮. অপচয় ও অপব্যয় করা
৯. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত করা
১০. বেশি বেশি ঘুমানো
৭. জামাতের সাথে ফরজ নানাজ আদায়ে অলসতা করা
৮. অপচয় ও অপব্যয় করা
৯. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত করা
১০. বেশি বেশি ঘুমানো
১১. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
১২. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
১৩. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
১৪. বিদআত করা
১৫. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা ইত্যাদি
রমজানে আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিনেনেজাম (নিয়ম বা রুটিন) পরিবর্তন করেন। তাই আমাদেরও রমজান উপলক্ষে দৈনন্দিন চলার রুটিনে পরিবর্তন আনা উচিত। রমজানে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, তারাবিহর নামাজ আদায়, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের জন্য আলাদা রুটিন করে রাখা অতিব জরুরি। অন্য মাস আর রমজানের মধ্যে পার্থক্য থাকা চাই।
যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়-১ নাক বা কানে ওষুধ প্রবেশ করালে।
২.ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
৩. কুলি করার সময় গলার মধ্যে পানি চলে গেলে।
৪. নারী স্পর্শ বা এ সংক্রান্ত কোনো কারণে বীর্য বের হলে।
৫. ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করলে
৬. আগরবাতি ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করালে।
৭. বিড়ি সিগারেট পান করলে।
৮. ভুলে খেয়ে ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাবার খেলে।
৯. সুবেহ সাদিকের পর খাবার খেলে।
১০. বুঝে হোক বা না বুঝে সূর্য ডোবার আগে ইফতার করলে।
১১. খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য নয় এমন কোনো বস্তু গিলে ফেললে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিকভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দিন ।আমিন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন