তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা, জামাতে আদায় ও ফজিলত প্রসঙ্গে



#মো. আবু রায়হান
রমযানে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবিহ নামাজ’ বলা হয়। তারাবীহ নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। তারাবির নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ, আদায় না করলে অবশ্যই গুনাহ হবে।সুন্নত ভেবে গড়িমসি করে তারাবীর নামাজ ত্যাগ করা উচিত নয়। অনেক আলেম ওলামা তারাবীকে ওয়াজিবের কাছাকাছি বলার চেষ্টা করেছেন।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কখনো আট রাকাত, কখনো ১৬ রাকাত, আবার কখনো ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু বিশেষ কারণবশত নিয়মিত ২০ রাকাত পড়তেন না। কেননা, তিনি কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। এ করুণা দৃষ্টির কারণে তিনি তাঁর আমলে প্রতিনিয়ত ২০ রাকাত পূর্ণ তারাবিহ জামাত হতে দেননি। যার দরুন সালাতুত তারাবিহ সুন্নত, ওয়াজিব নয়; তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত। 
তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে।তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা ২০ বলেন ইমাম  হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ।মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবীহ পড়েন। ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ হওয়ার সপক্ষে দলিল সহীহ হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘নবী করিম (সা.) রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন।’ (বায়হাকি)
এখনো মক্কা মদীনা ও বিশ্বের বড় বড় মসজিদে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ আদায় করা হয়। তারাবীর নামাজ পরে আদায় করা যায় না। যেদিনের নামাজ সেইদিন আদায় করতে হয়। রমজানের পরে তারাবীর নামাজ আদায় করা যায় না। এটা শুধু রমজান মাসের ইবাদত।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মাত্র চার রজনী তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়েছিলেন; কারণ যদি তিনি সর্বদা জামাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করেন, তাহলে তাঁর উম্মতেরা ভাববেন যে হয়তো এ তারাবিহ নামাজ ফরজ। হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের (রা.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের বেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকট এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা ফরজ করে দেওয়া হয়। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ৯২৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬১, মুআত্তা ইমাম মালেক : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৫৬ , হাদিস : ৩৭৫)।দৈহিক বা মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ২০ রাকাত অথবা কমপক্ষে আট রাকাত তারাবির সুন্নত নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ(সা.) এর যুগে এবং হযরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে এবং হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফলের প্রথম দিকে মুসলমানরা একাকী অথবা খণ্ড খণ্ড ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। অবশেষে হজরত ওমর (রা.) হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০১০)
বর্তমানে জামাতে নামাজ পড়ার পদ্ধতি হযরত ওমর( রাঃ) এর সময় চালু করা হয়েছিল । যা এখনো মুসলিম বিশ্বে অনুসরণ করা হয়।
তারাবিহ নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের রাতে কিয়াম আদায় করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে,  তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ আল-বোখারি, হাদিস : ১৯০১, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯, সুনানে দারেমি: ১৮১৭, মুসনাদে আহমাদ : ৯৪৪৫, মুসনাদে হুমাইদি : ১০৩৭)
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের ব্যাপারে সাহাবিদের  উৎসাহিত করতেন কিন্তু তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়তার সঙ্গে আদেশ করতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০০৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯, মুআত্তা ইমাম মালেক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৫৬ , হাদিস : ৩৭৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম )
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’
আল্লাহ তায়ালা রমজানে আমাদের তারাবিহ নামাজ আদায় করে পুণ্য হাসিল করার তাওফিক দিন। আমিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল