চা সমাচার

চা আহা কি মজার পানীয়। চায়ের নাম শোনেননি বা পান করেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ব্রিটিশরা এদেশে আসার পর চায়ের  জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। শীতের সকালে চাদর মুড়ি দিয়ে  কুয়াশার মধ্যে এক কাপ চা হলে কি যে খুশি হওয়া যায়। একটু  ইমাজিন করেন। কারো বাসায় বেড়াতে গেলে চা পান করেন বা না করেন এক কাপ চায়ের অফার তো সৌজন্যতার খাতিরে পাবেনই।  বাংলাদেশ চা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম কিন্তু চা খোরের সংখ্যায় ডাবল অর্থাৎ ষোলোতম। দিন দিন এদেশে চাখোরের সংখ্যা বাড়ছে ফলে চা রপ্তানির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ১৮৫৪  সালে সিলেটে মালিনীছড়ায় ব্রিটিশরা যে চায়ের আবাদ শুরু করল আজ অবধি তা চলছে। এখন বাংলাদেশে মোট চা বাগান ১৬৬ টি। গ্রিক দেবী থিয়ার নাম থেকে টি এবং টি  চীনা উচচারণে চি হয়ে পরবর্তীতে চা নাম ধারন করেছে। বিভিন্ন প্রকার চা আছে কালো চা সবুজ, হলদে ইত্যাদি। চা নিয়ে অনেক মজার কাহিনী তো আছে এইতো সেদিন চাখোর নাটকে দেখলাম মো. করিমের দিনে পঞ্চাশ-ষাট কাপ চা না হলো চলেই না। চা অনেকটা নেশার মতো যে নিয়মিত পান করে না।  সে  তেমনটা ফিল করেনা।
( এক)
এলাকার চেয়ারম্যানের বাড়ি  গেছে একজন গরীব কৃষক।  জীবনে চা পান করেনি সে।  কাজ শেষে ফেরার সময় চেয়ারম্যান সাহেব তাকে এক কাপ চায়ের অফার করলেন। সে রাজি হয়ে গেল। ভাবল জীবনে চায়ের অনেক নাম শোনেছি কিন্তু খাইনিতো। চা যথারীতি দেওয়া হল। চা পানের পর চেয়ারম্যান সাহেব বললেন কি আক্কাস মিয়া চা কেমন হইছে? তোমার ভাবী বানিয়েছে। গরীব কৃষক মুখটা ভার করে জবাব দিল গরীব দেখে যে গরম চা দিলেন চেয়ারম্যান সাহেব । ছোটবেলায় সেলিম প্রথম যেদিন চা পান করে। চা পানের পরপর প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছিল তার। সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাছে থাকা দুই গ্লাস পানি ঢক ঢক করে গিলে ফেলে। চা পান করে যে পানি পান চলে না তা সেলিমের জানা ছিলনা। সবাই খুব ভয় দেখাল তার দাঁত পড়ে যাবে। খুব ভয়ে ছিল। ফোকলা হবে বলে। আসলে গরম কিছু পান করে ঠান্ডা পানীয় জাতীয় কিছু পান করা অনুচিত ।
( দুই)
বাবা ছেলে দুজনে বাজারে গেছে। একজন দোকানে চা পান করছিল। ছেলে বাবাকে বলল বাবা লোকটা কি খায়? বাবা বলল চা। ছেলে বাবাকে বলল,  বাবা আমি চাইতে পারবোনা তুমি চাও।
চারিদিকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে। ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করল বাবা  বিশ্বকাপ কি?  বাবা বিরক্ত হয়ে জবাব দিল বিশ্বকাপ মানে বড় কাপ। ছেলে বলল আমাদের চায়ের কাপের চেয়ে বড়? হ্যাঁ বড়। ছেলে বায়না ধরল এ্যা এ্যা আমি ঐ বড় কাপে চা খাব।
(তিন)
আদা লেবুর রসে চা অসাধারণ হয়ে থাকে। এটি সর্দিকাশি ও গলা ব্যথার উপশমে খুবই উপকারী। বগুড়া আযিযুল হক কলেজে থাকা অবস্থায় সেখানে এ চা পান করেছিলাম। এখনও সেই আদা লেবুর রং চায়ের স্বাদ জিভে পায়। মনে হয় সেই ঘ্রাণ লেগেই আছে। ঢাকায় এসে এরকম বায়তুল মোকাররম মসজিদের গেটে দুধ চা খুব ভালো লেগেছে। ঢাকা মেডিকালের গেটের চাও খারাপ না। কিন্তু সব সময় যাওয়া হয়না। অনেকদিন পর সেদিন এক ফ্রেন্ডের সঙ্গে গেলাম কিন্তু আগের স্বাদ আর পেলাম না। শেষ ভরসা পলাশীর চা। রোজ সন্ধ্যায় পলাশী বাজারের এক কাপ চা নিজেকে অনেক সজীব ও সতেজ রাখে। চায়ের কাপ ভালোভাবে  পরিষ্কার না করায় কাপের ডাটি (হাতল) বা হতে ধরে চা পান করতাম। যাতে অন্যের মুখের কিছু যেন ঠোঁটে  লেগে না যায়।  যেহেতু সবাই ডান হাতেই চায়ের কাপে চুমুক দেয়।  তাই বিকল্প এ নিরাপদ ব্যবস্থা ফলো করতে লাগলাম। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল।  একদিন চা পানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বা হাতে ডাটি ধরে চায়ের কাপ ঠোঁটে নিতেই চায়ের কাপে চোখ আটকে গেল। খেয়াল করলাম আমাকে হয়তো কেউ ফলো করছে অথবা আমি তাকে ফলো করছি। চায়ের কাপে গোলাপের পাপড়ির মতো দুটো ঠোঁটের শৈল্পিক কারুকার্যখচিত কোনো ললনার লিপসটিকের ইমেজ।  বড়ই পুলকিত হলাম। তার কয়েকদিন পর দেখি অনেক পাবলিকই এ সিস্টেমে চা পান করছে।  কি আর করার চায়ের নেশা বড় নেশা ছাড়তে পারিনা। চা তো পান করতেই হবে।
(চার)

বিসিএস ভাইভায় প্রার্থীকে জিজ্ঞেস করল আপনি চা পান করেন। প্রার্থী হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। আচ্ছা আপনি যখন চা পান করেন তাহলে আপনার আই কিউ টেস্ট করি। আচ্ছা বলুন তো একটা চায়ের কাপের ডাটি (হাতল) কোনদিকে থাকে? আপনি এ প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিতে পারলে, আপনি ক্যাডার। প্রার্থীর মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। কি বলবে হাতে এক মিনিট সময়। ডানে না বামে। বাম হাতে ধরলে একদিকে। উফ শিট। নীরবতা ভেঙে সে বলল  বামে স্যার। ভাইভা বোর্ড বলল "ওকে ইউ মে গো নাও।"  উত্তর সে পারলনা। কোনোদিন এভাবে বিষয়টি নিয়ে সে ভেবে দেখেনি। উত্তর সহজ চায়ের কাপের ডাটি চা কাপের বাইরের দিকে থাকে।  ডানে,  বামে বা ভেতরে থাকে না।

সবকিছুতেই ভাবনার বিষয় আছে। আমরা সবকিছু সহজ ভাবে নিয়ে জীবনটাকে উপভোগ্য করতে পারি। ভুলের মধো আফসোসের কিছু নেই। অজ্ঞতার মধ্যে আফসোসের বসতি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল