দুর্যোগ কি মোকাবেলা করা যায়?



মো.আবু রায়হান: আমরা কথায় কথায় দুর্যোগ মোকাবেলা করার কথা বলি।আদৌও কি দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো হিম্মত ও সাহস আমাদের কি আছে? স্রষ্টা কর্তৃক সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আমরা কি উপযুক্ত! হায় বাঙালি মুসলমান! আমরা কথায় কথায় মোকাবেলা শব্দটি ব্যবহার করি কিন্তু এর সমার্থক অর্থ গুলো কি আসে আমরা কি তা জানি।? মোকাবেলা মানে সামনাসামনি বোঝাপড়া, বিরুদ্ধাচরণ, প্রতিশোধ ইত্যাদি। বিশ্বাস না হলে বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধান দেখুন। শব্দটির কত  ওজন,  কিন্তু  আমরা তা না জেনে হরহামেশাই তা ব্যবহার করছি। শব্দের অর্থ গুলো নিয়ে একবার চিন্তা করুন। দুর্যোগ দেন কে? কে বা তা প্রশমিতই করেন?  আমাদের কি তা মোকাবেলা করার মত সুযোগ ও সক্ষমতা আছে?  বিজ্ঞানের এ যুগে আমরা সর্বোচ্চ যেটা করতে পারি তা হলো দুর্যোগ পূর্ব কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। যা আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। কিন্তু রীতিমতো দুর্যোগ মোকাবিলায় নেমে পড়লেন? কেমনে সম্ভব? একবার চিন্তা করেন। শব্দ চয়নের ভুলের কারণে আমরা কত বড় স্পর্ধা দেখাচ্ছি! একবার ভেবে দেখেছেন। বলতে পারেন দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সাধ্যের মধ্যে যে ব্যবস্থা তা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ক্লিয়ার করার জন্য একটা উদাহরণ দেই। আমরা দুর্যোগকে একটি তীরের সঙে তুলনা করি। একটি তীর কেউ নিক্ষেপ করলে তা থেকে বাঁচতে হলে তিনটি কাজ করা যেতে পারে

১. ঢাল ব্যবহার করা।
২.তীরের আওতার বাইরে অবস্থান করা।
৩.তীরন্দাজের যদি টার্গেট মিস হয়। সেক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।

কিন্তু আল্লাহ যদি বিপদ কিংবা প্রাকৃতিক  দুর্যোগের তীর তার সৃষ্টির প্রতি ছুঁড়তে চান তাহলে উপরিউক্ত তিনটির কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা কাজে আসবে না।
প্রথমত: এ পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনো কোনো যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি। ভবিষ্যতেও তা হবে না। সুতরাং কোনো ঢাল কাজে লাগবে না। আল্লাহ যদি চাহেন আপনি রক্ষা পেতে পারেন।তাসবিহ তাহলিল দোয়া নেক আমল দিয়ে নিজেকে হেফাজত করতে পারেন কিন্তু  এ বাদে শত চেষ্টা করেও কোনো কাজে আসবে না। অতীতে শক্তিশালী আদ জাতিকে আল্লাহ  ঝড়তুফান, বিকট গর্জন ও বজ্রপাতে নিমিষেই মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন। বড় বড় দালান প্রাসাদ তাদের বাঁচাতে পারেনি। সামুদ জাতিকে ভুমিকম্পে মাটিতে বিলীন করেছেন। তারা কিন্তু মোকাবেলা করতে পারেনি। তারা কোনো ঢাল ব্যবহার করতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত : তীরের মতো এ দুর্যোগের বাইরে আমরা কোথাও যেতে পারবো না। দুর্যোগের যে আওতা তারমধ্যে থেকেই দুর্যোগ অবশ্যই গ্রহণ  করে নিতে হবে।নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যেতে পারেন। সেটিও আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ যদি চান রক্ষা করতে পারেন। সেটি ভিন্ন কথা। আসমান যমীনের একচ্ছত্র অধিপতির সাম্রাজ্য ছেড়ে কোথায় যাবেন? সেই উপায় কি ;আমাদের  আছে?আল্লাহ পাক বলেন - হে জিন ও মানবকূল, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।         (সুরা আর রাহমান - ৩৩)

তৃতীয়ত : তীরন্দাজের টার্গেট মিস হতে পারে কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের টার্গেট কখনো মিস হয় না।
আল্লাহ পাক বলেন - নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও বড়ই  কঠিন।
                                   (সুরা আল বুরুজ - ১২)
আল্লাহ কে ভয় কর আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।   ( সুরা মায়েদা - ২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা জালিমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, “তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য”। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]
মূল কথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয় সুতরাং এটি মোকাবেলা করার সাধ্য কারো নেই। আমরা শুধু পারি তার ইশারায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে পারি। শব্দ চয়নে ও কথনে আমাদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল