সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোজাদারের জন্য আল্লাহর কাছে পুরস্কার





রোজার রাখা হয় আল্লাহর জন্য এবং এর পুরস্কার তিনি নিজে দেবেন।হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দেবেন, তখন সে আনন্দিত হবে। (বুখারি-১৯০৪, ১৮৯৪; মুসলিম -১১৫১)  হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয় একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।’ (মুসলিম - ১১৫১; ইবনে মাজা - ১৬৩৮)।আল কুরআনের সূরা আন-আম এর ১৬০ নং আয়াতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার দশগুণ পাবে।’  সূরা বাকারার ২৪৫ নং আয়াতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে ‘যে লোক আল্লাহকে উত্তম’ করজ’ দিবে, আল্লাহ প্রতিদানে তাকে তা বহুগুণ বেশি করে দিবেন’। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রসূলে পাক (স.) বলেন, "যখন রমজান আসে তখন বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখা হয়" (মুসলিম শরীফ)।
রোজা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ফরজ বিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে তৃতীয়তম ভিত্তি। রোজা আল্লাহর কাছে এতটাই প্রিয় যে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে এর পুরস্কার দেব। সুতরাং যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বয়ং নিজে পুরস্কার দেবেন, সেখানে পুরস্কার কতটা অফুরন্ত হতে পারে, বান্দা সেটা ধারণাও করতে পারে না। রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহ আখিরাতে অফুরন্ত নেয়ামতের পাশাপাশি পার্থিব পুরস্কারও রেখেছেন। হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি।
১. রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও অধিক প্রিয়।
২.রমজান মাসে উচ্ছৃঙ্খল শয়তানদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ফলে তারা ওইসব গুনাহ করাতে পারে না, যেসব গুনাহ অন্য মাসে করাতে পারত।
৩. রোজাদারের জন্য প্রতিদিন বেহেশত সাজানো হয়। তারপর আল্লাহ বেহেশতকে বলেন, আমার নেককার বান্দাগণ শিগগিই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট দূরে নিক্ষেপ করে তোমার মধ্যে চলে আসবে।
৪. সমুদ্রের মাছও রোজাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। এর মানে
ফেরেশতাসহ সমস্ত সৃষ্টিই রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে, এমনকি সমুদ্রের মাছও।
৫. রমজানের শেষ রাতে রোজাদারের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তখন সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এই গুনাহ মাফ কি শবেকদরের রাতে হয়ে থাকে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না বরং শ্রমিক কাজ শেষ করার পরেই মজুরি পেয়ে থাকে। এর মানে রমজান মাসে শবেকদরের পুরস্কার ছাড়াও রোজা রাখার কারণে আলাদা একটি পুরস্কার রমজানের শেষ তারিখে দেওয়া হয়। সেটা হলো রোজাদারের গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়া। (মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাক্বী শরিফ)।যরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে, তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দোয়া কবুল হয়)। (ইবনে মাজাহ - ১৭৫৩)।রোজা রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে। হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন, রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দেব। (মুসনাদে আহমদ)।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি -২০১৪; মুসলিম - ৭৬০)।রোজাদারের সাথে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে মিলে যায় বান্দা পানাহার করে না। আল্লাহও কখনো পানাহার করেন না সুতরাং আল্লাহ খুশি হয়ে রোজাদারের জন্য উত্তম পুরস্কার দেবেন ।হযরত আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার -১০৩৯)।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন. রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান - ১৯৯৪)।

হযরত সাহল (রা) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে রাইয়্যান নামক একটি দরজা রয়েছে। কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতিত এ দরজা দিয়ে অন্য কাউকে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ঘোষণা দেয়া হবে- রোজাদাররা কোথায়?  তখন তারা (সব রোজাদার) দাঁড়াবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। রোজাদাদের প্রবেশের পরপরই (রাইয়্যান নামক) দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করনে না পারে।’ (বুখারি)হযরত ইবন সালিম আল মুকাফফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "নবী করিম (স.) ইফতারের সময় বলতেন, তৃষ্ণা নিবারিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা পরিতৃপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ ইনশাল্লাহ বিনিময় নির্ধারিত হয়েছে" (আবু দাউদ)।

গ্রন্থনায়- মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...