সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিপথে মুসলিম বিপন্ন ইসলাম


আজ মুসলিমবিশ্ব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। চারিদিকে ঘোর অমানিশা অনিশ্চয়তার দোলাচালে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিবাদ বিসম্বাদ হানাহানি কোলাহল পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে,   আজ পরস্পরে সংঘাত সংঘর্ষের যাঁতাকলে পিষ্ট। জিহাদের নামে অদৃশ্য আলো আঁধারি খেলায় নিজেদের জান্নাতী করতে গিয়ে মুসলিম বিশ্বকে করেছে ক্ষত বিক্ষত এবং নরকের টুকরো। মরীচিকার পেছনে ধাঁওয়া করতে গিয়ে দেশি বিদেশী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেরা আত্মাঘাতী ও ভাতৃঘাতী বিবাদে লিপ্ত। ইহুদি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট হয়ে মুসলিমদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর উদ্দেশে এই অশুভ ষড়যন্ত্র। অন্যায়ভাবে মানুষ মেরে তারা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা কোন ধরনের  ইসলাম? এটা তো মদীনার ইসলাম নয়। যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাসুল ( স.) সারা জীবন মেহনত করলেন নিজের জীবন দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার  জন্য উৎসর্গ করলেন, সেই ইসলাম ও জিহাদ এটা  নয় বরং এটি হচ্ছে সুস্পষ্ট ইসলামের বিধি লংঘন ও সন্ত্রাসী ক্রিয়া। ইসলাম বিরোধীদের চরিত্র। ইসলাম বলে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা গোটা পৃথিবীর মানুষকে হত্যা করা। কাউকে বাঁচানো পৃথিবীর সব মানুষকে বাঁচানো। কিন্তু আমরা কি দেখছি ইসলামের ছদ্মবেশে ইসলাম নামধারী কতিপয় বিপথগামীর হাতে ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব ভুলুন্ঠিত হচ্ছে যে কারণে ইসলাম ধর্ম ও এর অনুসারীদের পাইকারি হারে সন্ত্রাসী নাম দিয়ে  নিরপরাধ মুসলমানদের হেনেস্তা ও হত্যা করা হচ্ছে। ইসলামের নির্দেশ হল তোমরা পরস্পর আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধর পরস্পর  বিচ্ছিন্ন হয়োনা। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আজ মুসলমানরা শিয়া সুন্নী,মাযহাব লা মাযহাব, পীরপন্থি পীর বিরোধী, মাজার ও মাজার বিরোধী বিভিন্ন তরীকা ও আদর্শে বিভক্ত। যা ইসলামের নীতি ও আদর্শের বরখেলাপ। ইসলাম মুসলমানদের ভাতৃত্বের বন্ধন জোরালো করে দিয়ে ঘোষণা করল মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই অথচ এই ঐশী বাণী কে চরমভাবে অবজ্ঞা করে নিজেদের মত করে সব পরিবর্তন করে হানাহানিতে লিপ্ত। আজ আই এস, বুকো হারাম, আল শাবাব, আল কায়েদা. তালেবান, জে এমবি সহ বিভিন্ন দল ইসলামের নামে যা করছে তা ইসলামের জন্য মঙগলকর ও সহায়ক নয় বরং এরা ইসলামের আগাছা,  পরান্নভোজী পরজীবী। এরা ইসলামের আদর্শের হন্তারক বৈকি। এভাবে ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে  নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যা কখনোই ইসলামী আদর্শের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশেও বিভিন্নভাবে এক শ্রেণীর ব্লগারকে নাস্তিক মুরতাদ ও কাফের  ঘোষণা করে হত্যার হুমকি ও হত্যা করা হচ্ছে যা ইসলাম স্বীকৃত কোন পন্থা হতে পারে না। তবে ধর্ম ও মানুষের আবেগ জীবনাচারের উপর আঘাত হানে এমন বিষয়ের অবতরণা না করাই শ্রেয়।  ধর্ম পালনের সবার অধিকার আছে কেউ ধর্মীয় বিষয়ে অবমাননাকর কিছু করলে প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিয়ে  সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রতিকার পেতে পারেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম পালন করার যথেষ্ট অধিকার দিয়েছে যা সব ধর্মের জন্য প্রযোজ্য। আজ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কাউকে নাস্তিক বা মুরতাদ ঘোষণা করতে পারে না। ইসলাম হচ্ছে পরমত সহিষ্ণু ও সহনশীল একটি ধর্ম। রাসুল ( স,) বিদায় হজ্জের ভাষণে বললেন "খবরদার তোমরা ধর্ম  নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা তোমাদের পুর্ববর্তী জাতি ধবংস হয়েছে ধর্ম নিয়ে  বাড়াবাড়ির কারনে। " আল্লাহ পাক বলেন " দ্বীনের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি নেই " জাতীয় কবির অমর কবিতা দিয়ে বলা যায় "উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ, আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ "। আল্লামা ইকবাল বলেন "আরব হামারা, চিন হামারা, হিন্দুসতা হামারা , মুসলিম হ্যায় হাম ওয়াতান, হ্যায় সারা জ্যাঁহা হামারা" ( তারানাই হিন্দ কবিতা) ইকবাল আরেকটি কবিতায় বলেন "হে অঞ্চল পূজারী, এরা হিন্দি আর খোরাসানী, এরা আফগানি আর ওরা তুরানী, বাদ দাও এসব, ছড়িয়ে পড় সারাবিশ্বে, সাগর তরঙ্গময় "।( সংক্ষিপ্ত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...