সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জাপানিদের সততায় মুগ্ধ কিন্তু মুসলমানদের সততা!!

সততা উকৃষ্ট পন্থা। সততা মহৎ গুণ। ছোটবেলা থেকেই এগুলো পড়ে আসছি। সততা সত্যবাদিতা এসব শব্দের সঙে সবাই কম বেশি পরিচিত। সাম্প্রতিককালে জাপানিদের সততায় আমরা মুগ্ধ। সেই সঙে নিজেদের দুর্নীতি সততার  দেউলিয়াপনা নিয়ে বড়ই শঙ্কিত। আসুন জেনে আসি জাপানিদের সেই সততার গল্প। যেটি চাউর হয়েছে মানে ভাইরাল হয়েছে। জাপানীরা এমনিই পরিশ্রমী ও সততায় উত্তীর্ণ একটি জাতি । বাংলাদেশে জাপানিরা যে সততা দেখিয়েছে তা বর্তমান বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিরল ঘটনা।ঘটনা পড়ে যতটুকু জেনেছি জাপানিরা শুধু সেতুর জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত অর্থ শুধু ফেরত দেয়নি।তারা নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করে কাজের গতি, আন্তরিকতা ও যথেষ্ট  কর্তব্যপরায়ণ জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। খবর পড়ে  যা জানতে পারি।
ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে ‘চমক’ দেখালো জপানিরা। এক মাস সময় হাতে থাকতেই সেতুটির নির্মাণ শেষ করেছে তারা।
কেবল তাই নয়, ‘চমক’ দেখিয়েছে তিনটি সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়েও।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তার বেশ কয়েকমাস আগেই নতুন সেতু নির্মাণ ও পুরাতন বিদ্যমান সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হবে।
এর পূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে গড়াই ব্রিজ নির্মাণের কাজ (১৯৯০ সালে) নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করা হয়েছিল। এরপর নির্ধারিত সময়ের আগে পুরাতন মেঘনা ও গোমতী সেতুর কাজ শেষ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে। সবগুলো কোম্পানিই ছিল জাপানের। বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করার ইতিহাস একমাত্র জাপানিদেরই। আর কারও নেই। ১৯৯৫ সালের পর এই কাজটা তারাই করল।
জাপানিরা যে কাজটি করছে দায়িত্ববোধ ও সততা থেকে আমাদের কিন্তু এর চেয়ে বেশি সততার পরিচয় দেওয়া উচিৎ ছিল। সততা মুসলমানদের হারানো সম্পদ। মুসলমানরা আজ বিধর্মীদের বেশ ভূষা ও আচার আচরণ ধারণ করছে। অপরদিকে অমুসলিমরা মুসলমানদের ছেড়ে দেওয়া সততা নিয়ে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করছে।মক্কার জাহেলি যুগেও ইসলামপূর্ব সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান ব্যক্তিত্ব সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল কেবল তার সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে। নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও মক্কার লোকেরা তাঁর কাছে নিজেদের আমানত গচ্ছিত রাখত এবং সেসব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আসার জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের রাতে হজরত আলীকে (রা.) তার বিছানায় রেখে এসেছিলেন। আমৃত্যু তিনি তার সঙ্গী-সহচর সাহাবায়ে কেরামকে জীবনের সর্বত্র সত্য ও সততার অনুশীলনের প্রতি তাগিদ দিয়ে গেছেন। ইমাম আহমদের বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও, বিনিময়ে আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এ ছয়টি বিষয় হলো-কথা বলার সময় সত্য বলবে, ওয়াদা করলে তা রক্ষা করবে, কেউ আমানত রাখলে তা ফেরত দেবে, নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখবে, দৃষ্টি অবনত রাখবে ও অন্যায় থেকে হাত গুটিয়ে রাখবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে সততা বজায় রেখে চলেছেন। এমনকি হাসি-কৌতুকেও তিনি কখনো কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেননি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলেননি। সিরাতের কিতাবসমূহে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যবাদিতার অজস্র বিস্ময়কর ঘটনা আজও আমাদের জন্য সততার অনুপম অনুপ্রেরণা।
সততা ও সত্যবাদিতা মুমিন, মুসলিমের চরিত্রের
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। তাদের মাঝে থাকবে না কোন
মিথ্যাচার, কোন অসততা। এমনকি তাদের সঙ্গীর
মাঝেও না। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।" (সূরা আত- তাওবা আয়াত- ১১৯)
মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন ,"সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী (তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা পুরস্কার প্রস্তত রেখেছেন)।" (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৫)

আজ ভাবতে কষ্ট হয়। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সততা ও সুনীতির বড়ই সংকট। যে কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্নীতি দমনের নামে দুদক প্রতিষ্ঠিত করে অর্থ অপব্যয় করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ ভীতি ও ঈমান শক্তিশালী হলে এবং সততা থাকলে আমাদের এ অতিরিক্ত অর্থ অপচয় হতো না। বর্তমান সময়ে অফিস-আদালত থেকে শুরু করে বাজারের পান দোকানেও মিথ্যার ছড়াছড়ি। মিটিং-সমাবেশ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার আড্ডায়ও অহরহ মিথ্যা গালগল্প বলা হচ্ছে, শোনা হচ্ছে। সামান্য দু’পয়সা লাভের জন্য দেদারসে মিথ্যা কথা বলছে ব্যবসায়ীরা। ভোটের জন্য মিথ্যা বলছে রাজনীতিবিদরা। মামলায় মক্কেলকে জেতাতে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন উকিলরা, সেবাপ্রার্থীকে ফাঁসাতে ফাইল আটকে রেখে মিথ্যা অজুহাত দেখাচ্ছেন অফিসকর্মীরা। একটি মিথ্যা থেকে জন্ম নিচ্ছে অজস্র মিথ্যা। মিথ্যার এমন কদর্য সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে সত্যের সৌন্দর, শান্তি ও নিরাপত্তা।
যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে আমরা উম্মতে মুহাম্মদী, যে ইসলামের নামে আমরা মুসলমান, আমরা কি পারি না- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম চরিত্র ও আদর্শের অসংখ্য গুণাবলী থেকে এ ছোট্ট গুণটির প্রতি যত্নবান হতে? সত্যের শপথে বলীয়ান হয়ে সততায় ঘেরা সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে? মুসলমান বলে নয়, মানুষ হিসেবে স্বস্তি ও প্রশান্তির জন্য আজকের অস্থির সময়ে সত্যবাদিতার যে ভীষণ প্রয়োজন!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...