সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কৃষকের কেউ নেই

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকরা মাঠে ঘাটে কাজ করেন। অতি যত্নে সোনার ফসল ফলান। সেই কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত শস্যের মূল্য কি এ রাষ্ট্র দিতে পেরেছে? এদেশের ৮০% মানুষ কৃষক। যারা সূর্য উদয়াস্ত মানুষের পেটের আহার ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ তারা চরমভাবে  অবহেলিত। সার কীটনাশক কৃষি উপকরণের মূল্য যখন আকাশ ছোঁয়া তখনও কৃষক উৎপাদনে মনযোগী। কিন্তু কৃষকেরা উৎপাদিত ফসলের কি ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন ? দেশে হাজারো সমস্যায় ভরপুর যা বিভিন্ন কৌশলে বা পদক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকেরা যে ধানের ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত এ ব্যাপারে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। কৃষকেরা আজ ক্ষেতের ধান প্রতিবাদে পুড়ে ফেলছে কেউ কেউ রাস্তায় ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করছেন। তারপরও সরকারের টনক নড়ছে না। কেন সরকার আজ কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কষ্টের অভিব্যক্তি গুলো শুনছেন না?  দেশে আজ খুন ধর্ষণ, চাদাবাজি মারামারি মহামারী আকার ধারণ করছে। এ ব্যাপারে সবাই যেন নির্বিকার। ভাব খানা এরকম যে দেশের কোথাও কিছুই হয়নি। অথচ প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় চোখ বুলানো যায় না। এসব নিউজ পড়ে শুধু হাইপারটেনশনই বাড়ে। আমরা কি এমন অশান্তির জোড়াতালি উন্নয়নের দেশ চেয়েছিলাম। ফেনীর নুসরাত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পিশাচদের হাতে আগুনে পুড়ে মারা গেল। সবাই পাশে দাঁড়ালো। প্রতিবাদ করলাম। অপরাধীদের ধরা হলো। বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। নুসরাতের ভাইকে চাকরি দেওয়া হলো ভালো কথা। আমরা ভিকটিমের পাশে দাঁড়িয়ে শান্তনা দিলাম। এমনই তো হওয়া উচিত। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হলো। পদ বঞ্চিতরা আন্দোলন করল, মার খেল। বিতর্কিতদের প্রধানমন্ত্রী বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এসবে আমরা চটজলদি পদক্ষেপ দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু কৃষকদের বেলায় সরকার কেন নিশ্চুপ? কৃষকদের সমস্যা সমাধানে আজ অবধি কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে? ধানের।  মূল্য কি বাড়ানো হয়েছে? বরং কিছু মন্ত্রী এমপি কৃষকদের ব্যাপারে লাগামহীন মন্তব্য করছেন। আমরা নিজেদের কৃষক বান্ধব সরকার পরিচয় দেয়। আজ কৃষকের দুর্দিনে তাদের পাশে আমরা কেন নেই?  ধানের ন্যায্য মূল্য  দিতে পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না।
বাজারে এখন ধানের দাম মণপ্রতি ৫০০ টাকা। সরকার ১০ লাখ টন চাল, দেড় লাখ টন আতপ চাল ও দেড় লাখ টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চালের দাম ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা। ধান ২৬ টাকা। অথচ কৃষকের এক কেজি ধান উৎপাদন করতেই ৩৬ টাক খরচ পড়ে। এ অবস্থায় কৃষকের লোকসান ঠেকানোর উপায় নেই। নিরুপায় হয়েই কৃষকেরা প্রতিবাদ করছেন।ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে ধানের মূল্যকম হলেও পদক্ষেপ নিচ্ছি না। আসলে আমরা কাদের পক্ষে? কি চাই? আজ খবরে পড়ছি দেশের বাহির হতে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে। বড়ই দুর্ভাগা এক জাতি আমরা। দেশ প্রেম আজ নির্বাসিত। আমাদের যা আছে আখের গোছানো লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচারে বিলাসী জীবন। দেশটাকে শোষণ করে আমরা শ্মশান বানিয়েছি। যে যেভাবে পাড়ি দেশটাকে পঙ্গু করে ফেলছি। দেশ সেবার চেয়ে দেশের বারোটা বাজানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। দেশের জন্য যতই আমরা উপরে উপরে মায়া কান্না করিনা কেন?এসব সবই ধান্দা আর লোপাটের ফন্দি। সব কিছু পর্যালোচনা করে এটিই প্রতীয়মান হয় দেশের রাঘব বোয়ালরা এদেশের কথা খুব কমই ভাবেন। যেটুকু দেশপ্রেম আছে তা সাধারণ জনগণের মধ্যে বিদ্যমান। দেশের দুর্দিনে এই সাধারণ জনগণই রুখে দেবে শোষককে। একাত্তরের চেতনায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারাই হবে একেকটা প্রতিরোধের ঢাল। শত্রুর আতঙ্ক!
শেষ করি বঙ্গবন্ধুর অমর বাণী দিয়ে -
" এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে। "

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...