সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চীনের উইঘুর মুসলমানদের রোজা রাখতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা।


বছর ঘুরে মুসলিম বিশ্বে এসেছে মাহে রমজান। এ রমজান মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা রোজা রাখতে পারলেও চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমরা রমজান মাসে রোজা রাখতে পারছে না।
জিনজিয়াং চীনের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে। এবং একই সাথে এই অঞ্চল চীনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এর সীমান্তের ওপাশে আছে আরো কয়েকটি দেশ- ভারত, আফগানিস্তান এবং মঙ্গোলিয়া।

মধ্য এশিয়ায় বসবাসরত তুর্কি বংশোদ্ভূত একটি জাতিগোষ্ঠী। বর্তমানে উইঘুররা মূলত চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে বসবাস করে। উইঘুররা এই অঞ্চলের সরকারিভাবে স্বীকৃত ৫৬টি নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম। এখানকার ৮০% উইঘুর অঞ্চলের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে তারিম বেসিনে বসবাস করে।জিনজিয়াং এর বাইরে উইঘুরদের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় দক্ষিণ মধ্য হুনান প্রদেশে রয়েছে।চীনের বাইরে মধ্য এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্র যেমন কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উইঘুর বাস করে। উইঘুরদের বেশিরভাগই মুসলিম। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে তাদের  সংখ্যা প্রায় এক কোটি দশ লাখ।
নিজেদেরকে সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে মধ্য এশীয়র লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন।গত কয়েক দশকে সংখ্যাগুরু চীনা হান জাতির বহু মানুষ শিনজিয়াং অঞ্চলে গেছেন সেখানে বসবাস করতে। উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করছেন এর ফলে তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে।
নরওয়ে, আইসল্যান্ড হয়ে ফিজি সব দেশেই মুসলিমরা রমজানের ইবাদতে অংশ নিতে পারলেও চীনে মুসলিমদের এ সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট সরকার রমজানে উইঘুরের মুসলিমদের রোজা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
চীনের অন্যান্য প্রদেশে আইনটি কার্যকর হলেও জিনজিয়াং প্রদেশে এর প্রবণতা বেশি। উপবাস বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের প্রতি বিশেষ আগ্রহকে চরমপন্থার প্রতীক হিসেবে দেখে চীন সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসঙ্ঘের ওই কমিটির কাছে  তথ্যচিত্র তুলে ধরে দাবি করেছে, চীনা মুসলমানদের বন্দিশিবিরে আটকে রেখে সেদেশের প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
উইঘুর মুসলমানদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস বলেছে, বন্দীদের কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটকে রাখা হচ্ছে এবং সেখানে তাদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্লোগান  দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বন্দীদের ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হয়
রমজান উপলক্ষে জিনজিয়াংয়ের খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময়ের মতো রমজানেও খাবার দোকান গুলো খোলা থাকবে। এ ছাড়া রমজানে রোজা, তারাবির জন্য রাত জাগা ও অন্যান্য ধর্মীয় আচরণ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সি উইঘুর নামে একটি ওয়েসবাইটের তথ্যমতে, পৃথিবীতে চীনই একমাত্র দেশ, যেখানে মুসলমানদের রোজা রাখতে সরকারি ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। গত তিন বছর ধরে জিনজিয়াংয়ের উইঘুরের মুসলমানরা রোজা রাখতে পারছেন না। এদিকে রমজান মাসে সরকারি দফতর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্কুলগুলোতে মুসলিমদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গত বছরে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি জানিয়েছিল, চীন সরকার দেশটির ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখেছে। চীনের জাতিগত উইঘুর মুসলমানদের বেশির ভাগ সে দেশের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করেন। প্রদেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী উইঘুর সম্প্রদায়ের। জিনজিয়াংয়ের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ব্যাপকহারে আটক করা হচ্ছে বলে কয়েক মাস ধরে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...