সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুলতান শাহ জাহান বেগম


ভোপাল রাজ্য আঠার শতাব্দীর ভারতবর্ষে একটি রাষ্ট্র ছিল, ১৮১৮ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের সাথে সহায়ক রাষ্ট্র এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। রাজ্যটি ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মোগল সেনাবাহিনীর পশতুন সৈনিক দোস্ত মোহাম্মদ খান দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যিনি সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে ভাড়াটে সৈনিক হন এবং তাঁর রাজত্বকে একাধিক অঞ্চল সংযুক্ত করেছিলেন। এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই এটি ১৭২৩ সালে হায়দরাবাদের নিজামের আধিপত্যের আওতায় আসে। ১৭৩৭ সালে, মারাঠারা মুগল ও ভোপাল নবাবদের ভোপাল যুদ্ধে পরাজিত করে এবং রাষ্ট্র থেকে রাজস্ব সংগ্রহ শুরু করে। তৃতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয়ের পরে, ভোপাল ১৮১৮ সালে একটি ব্রিটিশ দেশীয় রাজ্য হয়। ভোপাল রাজ্যটি স্বাধীনতার পূর্বে একজন মুসলিম নেতৃত্বের অধীনে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ছিল, প্রথমটি ছিলো হায়দরাবাদ রাজ্য । রাজ্যটি ১৯৪৯ সালে ভোপাল হিসাবে ভারতীয় ইউনিয়নে একীভূত হয়। ১৮১৯ থেকে ১৯২৬ এর মধ্যে ভোপাল চারজন মহিলা দ্বারা শাসিত ছিল। এরা বেগম নামে পরিচিত ছিলো। কুদসিয়া বেগম প্রথম মহিলা শাসক ছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি তাঁর একমাত্র কন্যা সিকান্দার বেগম, পরে তাঁর (সিকান্দার বেগমের) একমাত্র কন্যা শাহ জাহান বেগম পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। সুলতান শাহ জাহান বেগম সর্বশেষ মহিলা শাসক ছিলেন, যিনি ২৫ বছর শাসন করার পরে তার পুত্র হামিদুল্লাহ খানের কাছে ক্ষমতা করেন। বেগমদের শাসনের ফলে এই শহরটিতে জলছবি, রেলপথ, একটি ডাক ব্যবস্থা করেন এবং ১৯০৭ সালে একটি পৌরসভা গঠন করেন।

সিকান্দার বেগমের উত্তরসূরি শাহ জাহান বেগম (বেগম ১৮৪৪-৬০, সিকান্দার বেগম রিজেন্ট ছিলেন; ১৮৬৮-১৯০১ পর্যন্ত শাসন করেন) তাঁর মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের মতো স্থাপত্য সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। তিনি তার নামে শাহজাহানাবাদ নামে একটি বিস্তৃত ছোট-শহর তৈরি করেন। তিনি নিজের জন্য একটি নতুন প্রাসাদও তৈরি করেছিলেন তাজমহল (আগ্রার বিখ্যাত তাজমহলের সাথে বিভ্রান্ত হবেন না)। তিনি আলী মনজিল, আমির গঞ্জ, বারাহ মহল, আলী মঞ্জিল, নাজির কমপ্লেক্স, খাওয়াসৌরা, মুঘালপুরা, নেমাটপুয়া এবং নবাব মঞ্জিল সহ আরও অনেক সুন্দর স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। আজ, কেউ তাজমহলের ধ্বংসাবশেষ সময়ের সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। তার শাসনামলে, ১৯০০ সালে, বর্ষার বৃষ্টির অভাবের কারণে ভোপালে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। শাহজাহান বেগমের কৃতিত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যে তাঁর শাসনামলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছিল। এই সময়কালে ভোপাল সবচেয়ে বেশি ছিল মূলত এর উচ্চতর কারুশিল্প এবং স্বর্ণের সমৃদ্ধ কাজের কারণে ভারতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির অবদান।
অনেকে মনে করেন, দিল্লির জামে মসজিদই ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ। এই মসজিদ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদগুলোর অন্যতম। শাহ জাহান বেগম এই মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবং তার কন্যা সুলতান জাহান বেগম নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। তার জীবদ্দশায় তহবিলের অভাবে মসজিদটি সম্পন্ন হয়নি এবং ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের পরে নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ হওয়ার পরে ১৯৭১ সালে ভূপালের আল্লামা মোহাম্মদ ইমরান খান নদভী আজহারী এবং মাওলানা সায়েদ হাশমত আলী এর নির্মাণকাজ শুরু করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...