৫০ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধা
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা। এ পর্যন্ত মোট ছয়বার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে অনেকবার।১৯৭২ সালে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যেকোন সংগঠিত দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।সে হিসাবে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরযুক্ত সনদ যাদের কাছে ছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।পরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন এমন মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী,বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতে শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, এবং দেশে বা বিদেশে বিভিন্নভাবে অবদান রাখা ব্যক্তিরাও।তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সের সীমাও কয়েকবার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ এখন সরকারের নির্ধারিত বয়স হচ্ছে,
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে কিংবা এর আগে কমপক্ষে ১২ বছর ৬ মাস বা জন্ম তারিখ ১৯৫৯ সালের ৩০ মে তারিখের আগে হতে হবে বলে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারের সময়ে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিম্নরুপঃ
সাল সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা
১৯৮৪ ( জাতীয় পার্টি) ১০২৪৫৮ জন
১৯৮৬ ( :::::::::: ) ৬৯৮৩৩ জন
১৯৯৪ ( বিএনপি ) ৮৬০০০ জন
২০০১ ( আওয়ামীলীগ) ১৮৬৭৯০ জন
১৫৮৪৫২ জন
২০০৬ ( বিএনপি ) ১৯৮৮৮৯ জন
বর্তমানে দেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬০ জন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।দেশে ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩২ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানী ভাতা পেয়ে থাকেন। আর উৎসব ভাতা, মহান বিজয় দিবস ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পান ২ লাখ ৫ হাজার ১১৭ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা।এ ছাড়া সম্মানী ভাতা পান ১১ হাজার ৯৯৮ জন শহীদ, যুদ্ধাহত ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাসিক সম্মানী ভাতা পাওয়ার মধ্যে আরও রয়েছেন ৫৮৭ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মাসিক সম্মানী ভাতা একটু বেশি। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করে। প্রথমবার ৩০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্মানী ভাতা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা এখন উত্সব ভাতা, মহান বিজয় দিবস ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টে সরাসরি সম্মানী ভাতা পাঠানো কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমার সরকারের সময় অবহেলায় থাকতে পারেন না। এখন আমার মনে হয়, ১২ হাজার টাকা কিছুই নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার নিচে অনেক স্লট রয়েছে। আমরা এই তালিকার নিচের স্লটগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে এসে পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করব।’ প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এই ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু গত জুলাই মাস থেকেই কার্যকর হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ইংরেজি প্রতিশব্দ নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ইংরেজিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে হিরোইক ফ্রিডম ফাইটার লিখতে হবে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।এর আগে গত বছর অক্টোবরে সব ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে 'বীর' শব্দ ব্যবহারের বিধান করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এখনো অবহেলিত কেউ রিকসা চালায় কেউবা দিনমজুরের কাজ করে। আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ঘুরে বিলাসববহুল গাড়িতে, লাল সবুজের পতাকা লাগিয়ে। এদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটে সরকারি চাকরি ভাগিয়েছেন । হায় সেলুকাস আমার জন্মভূমি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন