সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নাইজার

 

 

পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ নাইজার। দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুরকিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া, এবং পূর্বে চাদ। স্থলবেষ্টিত এই দেশটির নাম রাখা হয়েছে নাইজার নদীর নামানুসারে। আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সম্পূর্ণ স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র নাইজার। দেশটির শতকরা ৮০ ভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। দেশটির উচ্চতম স্থান হচ্ছে মাউন্ট গ্রিবাউন, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৩৭৮ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এবং নিম্নতম স্থান হচ্ছে নাইজার নদীর সীমান্তে ও সেনেগাল নদীর শুরুতে। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৯০ ফুট উঁচু।

রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর : নিয়ামি।

আয়তন : ১২ লাখ ৬৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ২২তম বৃহত্তম দেশ।

জনসংখ্যা : দুই কোটি ছয় লাখ ৭৩ হাজার।

জাতিগোষ্ঠী হাউসা ৫৬% ,জেরমা ২২%, ফুলানী ৯% ,তুয়ারেগ ৮%।

ধর্মঃ ৯৮% মুসলিম,০.৫ % খ্রস্টান।

জাতীয় ভাষা : আরবি বুদুমা, ফুফুলদে, গৌরমানচেমা, হাউসা কানুরি।

আইনসভা : জাতীয় পরিষদ।

দাপ্তরিক ভাষা : ফরাসি।

ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা : ৩ আগস্ট ১৯৬০।

মূদ্রা : পশ্চিম আফ্রিকান সিএফএ ফ্রাঁ।

জাতিসংঘে যোগদান : ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬০।

ইতিহাস

নাইজারের পলীয় যুগের সন্ধান পাওয়া গেছে। উপনিবেশকারীদের আগমনের আগে এখানে অনেক রাজত্বের পত্তন হয়েছিল। একাদশ শতাব্দীতে নাইজার অঞ্চলে ইসলামের প্রবেশ ঘটে। ইউরোপীয়রা সর্বপ্রথম আসে ১৮ শতকের শেষদিকে। নাইজার ১৯০৪ সালে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আফ্রিকার একটি অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৪থেকে ১৯৬০পর্যন্ত দেশটি ফরাসিদের অধীনে ছিল। নাইজার ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।১৯৬০ সালের ৩ আগস্ট নাইজেরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে । ১৯৫৮সন হতেপ্রধানমন্ত্রীহামানি দিওরিস্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপ্রধান হন। ১৯৬০,১৯৬৫, এবং ১৯৭০সনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে পুননির্বাচিত হন ।১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল নাইজারের প্রথম প্রেসিডেন্ট হামানি দিওরি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। অভ্যুত্থানের নেতা . মিনি কাউচি সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন।তিনি সংসদ ভেঙে দেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। পরে ১৯৯৩ সালে নাইজারে প্রথম অবাধ নির্বাচন হয়। স্বাধীনতার পর থেকে নাইজারে পাঁচবার সংবিধান বদল হয়েছে। দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে তিনবার। সর্বশেষ ২০১০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা :

নাইজারে ৭টি বিভাগ ও ৩৬টি ডিপার্টমেন্ট আছে।

শিক্ষা

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশটি ৭১.৩ শতাংশ মানুষ লিখতে-পড়তে পারে না। বিশ্বের নিম্ন সাক্ষরতার দেশগুলোর মধ্যে তারা অন্যতম।

খনিজ

কৃষিনির্ভর এই দেশটি খনিজসমৃদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইউরেনিয়ামের মজুদসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে নাইজার অন্যতম। তবে বিশ্বে ইউরেনিয়ামের চাহিদা কমে যাওয়ায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তাদের অর্থনীতি।

খরা-

দেশটির মরুভূমির বাইরের অংশটি প্রায়ই খরায় আক্রান্ত হয়। স্থলবেষ্টিত সীমান্ত, মরুভূমি, অকার্যকর কৃষিব্যবস্থা, কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা, শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, অবকাঠামো সংকট, মানহীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশগত কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশটি।

জলবায়ু -

অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে নাইজারের দক্ষিণাঞ্চল কৃষিসমৃদ্ধ। বৃষ্টি না হওয়ায় দেশটির উত্তরাঞ্চল মরুভূমিময়। এখানে তীব্র পানি সংকট রয়েছে। তবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে নাইজার নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৫৪ মিলিমিটার।

নাইজার নদী

নাইজার নদী পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান নদী যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪,১৮০ কিমি ।এর অববাহিকার আয়তন ২১,১৭,৭০০ বর্গকিলোমিটার । নদীটির উৎস গিনির দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গিনি হাইল্যান্ডস। এটি মালি, নাইজারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেনিনের সীমান্ত ঘেঁসে নাইজেরিয়াতে প্রবেশ করে। এরপর নাইজেরিয়ায় একটি বিশাল ব-দ্বীপের সৃষ্টি করে, যা নাইজার ব-দ্বীপ নামে পরিচিত, নদীটি গিনি উপসাগরের মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...