সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পশ্চিম আফ্রিকা

 


 

পশ্চিম আফ্রিকা বলতে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমাংশ অবস্থিত একটি বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত অঞ্চলকে বোঝায়। সংজ্ঞা অনুযায়ী এটি ১৮টি দেশ বা রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত: বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, কাবো ভের্দি, গাম্বিয়া, গানা, গিনি, গিনি বিসাউ, কোত দিভোয়ার, লাইবেরিয়া, মালি, মোরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেন্ট হেলেনা দ্বীপ, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি এবং টোগো।আয়তন : ৫১ লক্ষ ১২ হাজার ৯০৩ বর্গকিলোমিটার । জনসংখ্যা৩৮১মিলিয়ন। পশ্চিম আফ্রিকার ৬০%মানুষের ধর্ম ইসলাম ।মুসলিম অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে সেনেগাল, গাম্বিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, গিনি, নাইজার; সিয়েরা লিওন এবং অভ্যন্তরীণ লাইবেরিয়ার উপরের উপকূল এবং অভ্যন্তরীণ দুই-তৃতীয়াংশ। বুর্কিনা ফাসোর পশ্চিম, উত্তর এবং সুদূর-পূর্ব অঞ্চল; এবং নাইজেরিয়া, বেনিন, টোগো, ঘানা এবং আইভরি কোস্টের উপকূলীয় দেশগুলির উত্তর ভাগে।

পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলাম –

৭মশতাব্দীতে মুসলিম আরবদের দ্বারা উত্তর আফ্রিকা বিজয়ের পরে, ইসলাম ৯ম শতাব্দীতেপশ্চিমআফ্রিকায়বণিক, ব্যবসায়ী, পণ্ডিত এবং ধর্ম প্রচারকদেরমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।ইসলাম অষ্টম শতাব্দী-তে সাভানা অঞ্চলে পৌঁছেছিল, সেই সময় থেকেই মুসলিম-আরব ইতিহাসবিদরা পশ্চিম আফ্রিকার ইতিহাস লেখা শুরু করেন। বিখ্যাত পণ্ডিত ইবনে মুনাব্বাহ ৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকা নিয়ে লিখেছিলেন, এরপরে আল-মাসুদি ৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে এই নিয়ে লেখেন। ইসলাম যেহেতু সাভানা অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছিল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর আফ্রিকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল।ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসারের ফলে নতুন সংস্কৃতি স্বাভাবিক ভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল, এবং তার ফলে সাক্ষরতার প্রবর্তন ও প্রসারও হয়েছিল। এর ফলে আগামী শতাব্দীতে সুদানের কিছু অংশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। বেশিরভাগ আফ্রিকার শাসকরা ইসলামধর্মকে সহ্য করে এবংনিজেরা ইসলামধর্মে দীক্ষিত হয়। টেকুর সাম্রাজ্যের ডায়ো’ওগো রাজবংশ ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাঁরা ছিলেন প্রথম নিগ্রো, যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এই কারণেই মুসলিম-আরব ঐতিহাসিকরা বিলাদ আল-টেকুরকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের দেশ’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। রাবিসের পুত্র ওয়ার-জাবী ছিলেন টেকুরের প্রথম শাসক, যাঁর রাজত্বকালে ইসলাম দৃঢ় ভাবে টেকুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ইসলামী শরীয়া আইন কার্যকর করা হয়েছিল। এর ফলে জনগণকে একটি অভিন্ন মুসলিম আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। ১০৪২ খ্রিস্টাব্দে যখন আলমোরাভিডসের আল-মুরবিতুন টেকুর আক্রমণ শুরু করেছিলেন, ততদিনে ইসলাম এই অঞ্চলের লোকদের উপরে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।১৫১১ সালে আল-ইদ্রিসি টেকুর দেশকে ‘সুরক্ষিত, শান্তিপূর্ণ ও প্রশান্তি’র দেশ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। টেকুরের রাজধানী শহরটিকেও টেকুর বলা হত, যা একটি বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা সেখানে বিক্রি করার জন্য গ্রেটার মরক্কো থেকে পশম নিয়ে আসত এবং তার বিনিময়ে নিজেদের সাথে সোনা এবং পুঁতি নিয়ে যেত। মুসলিম ভূগোলবিদ আল-বাকরি ঘানার প্রাচীন সোনিনকে সাম্রাজ্যের প্রাথমিক বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর কিতাব ফী মাসালিক ওয়াল মামালিক (বিভিন্ন রাস্তা এবং সাম্রাজ্যের বই)-এ ১০৬৮ সালের ঘানাকে অত্যন্ত উন্নত দেশ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে এটি একটি সমৃদ্ধ দেশ ছিল। বাদশাহ মুসলিম দোভাষীদের নিয়োগ করেছিলেন এবং তাঁর অধিকাংশ মন্ত্রী ও কোষাধ্যক্ষও ছিলেন মুসলমান। মুসলিম মন্ত্রীরা প্রত্যেকে উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন এবং আরবিতে সমস্ত ঘটনা লিখে রাখতেন। ঘানা শহর মূলত সমতলে অবস্থিত ছিল, এবং এর এখানে মূলত মুসলমানদের বসবাস ছিল। সেই আমলে এই শহরে ১২টি মসজিদ ছিল, এবং প্রতিটি মসজিদের ইমাম, মুয়েজিন ও কুরআন তিলাওয়াতকারী ছিলেন। এই শহরের অধিকাংশ পুরুষই শিক্ষিত মুসলিম ছিলেন।

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...