ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশিরা

 





ফিলিস্তিনিনের সঙ্গে বাংলাদেশের শুধু ধর্মীয় ও সহমর্মিতার সম্পর্ক নয়। তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশিরা সরাসরি অংশও নিয়েছে। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশেই একমাত্র দেশ, যে দেশ ইসরায়েলকে তার পাসপোর্টে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সহায়তা করে।
১৯৮০ সালের দিকে ফিলিস্তিনিদের কিংবদন্তি নেতা ইয়াসির আরাফাত তখন ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি গড়ার সংগ্রাম করছেন। বরাররের মতো ইসরায়েলি সেনারা তখনও খড়গহস্ত। নিরুপায় ইয়াসির আরাফাত মুসলিম উম্মাহর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রামে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশি তরুণ।
“8,000 Bangladeshi youths had volunteered to fight for the Palestine Liberation Organization,” (US Library of Congress)
মার্কিন লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ১৯৮৮ সালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ‘৮ হাজার বাংলাদেশি যুবা তরুণ ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) হয়ে যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন’। ১৯৮১ ও ১৯৮৭ সালে ইয়াসির আরাফাত ঢাকায় এসে বাংলাদেশিদের ফিলিস্তিনের সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশিরা লেবাননে অবস্থান নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন । তাদের সবাই অবশ্য যুদ্ধে অংশ নেননি। অনেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাহায্য করেছেন ওই যুদ্ধে। চরম গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়া থেকে শুরু করে অস্ত্র-রসদ বহন এমনকি পাহারার কাজও করেছিল এসব বাংলাদেশি যুবকেরা।ওই যুদ্ধে মারাও গিয়েছিলেন শতাধিক বাংলাদেশি। অকাতরে জীবন দেন ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের আঘাতে। তাদের সমাহিত করা হয়েছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননের মাটিতে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবেই বাংলাদেশি এই স্বেচ্ছাসেবীদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সংঘাতের পর লেবাননে জাতিসংঘের বাহিনী মোতায়েন করা হয় ১৯৮২ সালে। এরপরই বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা লেবানন ছাড়তে শুরু করেন। অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
তবে অনেক যোদ্ধা লেবানন ছেড়ে দেশে অথবা ভিনদেশে ঠাঁই গাড়লেও ফেরা হয়নি অনেকের। এদের মধ্যে অন্তত একজনের শেষশয্যা হয়েছিল দক্ষিণ লেবাননের শাতিলা রিফিউজি ক্যাম্পের পাশে একটা কবরস্থানে। ওই বাঙালি বীরের কবর ও নামফলক এখনো রয়েছে। বাংলাদেশি সেই বীরের নাম কামাল মুস্তাফা আলি। তার পরিচয়ের বিস্তারিত কোনো কিছুই কবরের ওই নামফলকে নেই। শুধু আছে শহীদ সেই বীর আর তার জন্মভূমি বাংলাদেশের নাম। ওই নামফলকে উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও।
‘আর যারা আল্লাহর জন্য শহীদ হন, তাদেরকে কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।
ফিলিস্তিনিদের জন্য যুদ্ধে গিয়ে ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে আবু সামা নামে এক বাংলাদেশি লেবানন থেকে বাংলাদেশে ফিরেন। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে আশির দশকে তিন দেশ ছেড়ে ছিলেন।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করে যেখানে একজন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে দেখা যায়, যার পেছনে রয়েছে কাঁটাতারে ঘেরা আল-আকসা মসজিদ। সেখানে আরবি ও ইংরেজিতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার সাহসিকতার কথা বলা হয়েছে।ডাকটিকেটে ইংরেজীতে লেখা হয়, ‘আমরা বীর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের সালাম জানাই ।’

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল