ইসরায়েলের আয়রন ডোম
ইসরায়েল ফিলিস্তিনে বিমান হামলার পর গাজা থেকে হামাস ইসরায়েলের ভূখন্ডে বিরতিহীনভাবে রকেট নিক্ষেপ করে চলছে। এ পর্যন্ত সহস্রাধিক রকেট ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। নিহত হয়েছে দশজনের বেশি ইসরায়েলি নাগরিক। রকেট হামলায় ইসরায়েল এ মুহূর্তে কিছুটা বিপর্যস্ত যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে আয়রন ডোম হামাসের ছোঁড়া রকেট থেকে তাদের কিছুটা নিরাপত্তা দিয়েছে। যদিও অনেকাংশেই আয়রন ডোম তাদের কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা নিশিত করতে পারেনি। এ নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা। ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করে হামাসের রকেট আছড়ে পড়েছে তেল আবিবসহ ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে।হামাসের দাবি, তাদের ক্ষেপনাস্ত্রে এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার ইসরাইল। অন্যদিকে ইসরাইলের দাবি, হামাসের হামলার ৮০ শতাংশই প্রতিহত করেছে তাদের আয়রন ডোম এবং বাকি দুই শতাধিক রকেট বিভিন্ন স্থাপনা ও স্থানে হামলা চালিয়েছে।তবে হামাসের রকেট হামলায় নিজের প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। শহরের পাইপলাইন ও তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষেপনাস্ত্রের বিষয়ে হামাস জানিয়েছেন, এবার তারা দখলদার ইসরাইলের রামুন বিমানবন্দরে আইয়াশ-২৫০ নামে মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের আয়রন ডোন ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।
আয়রন ডোম সিস্টেম একটি অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। একটি শর্ট রেঞ্জ গ্রাউন্ড টু এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (short-range ground-to-air defence system)। যা ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশকারী শত্রুপক্ষের মিসাইল বা ওই ধরনের অস্ত্র যেমন, আর্টিলারি,মিসাইল, মর্টারকে ট্র্যাক করার পর ধ্বংস করে দেয়। শুধু তাই নয়, বিনা অনুমতিতে কোনও হেলিকপ্টার বা বিমানও যদি ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তবে সেটিকেও আটকে দেয় আয়রন ডোম। ২০০৬ সালে লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধের সময় প্রথম এই আইরন ডোমের কথা ঘোষণা করে ইসরায়েল। তার ৬ বছর পর ২০১১ সালে আয়রন ডোমকে নিরাপত্তার কাজে মোতায়েন করা হয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ ভাবে আয়রন ডোম নিয়ে কাজ করা সংস্থা রাফালে অ্যাডভান্স ডিফেন্স সিস্টেম জানাচ্ছে, 'এটি হল মাল্টি পারপাস কমব্যাট-প্রোভেন সিস্টেম, যা ক্রুজ মিসাইল, আর্টিলারি, পিজিএম, ইউএভি-র মতো আক্রমণকে চিহ্নিত ও মূল্যায়নের পর প্রতিহত করে।' রাফালের দাবি, দিনে বা রাতে এবং যে কোনও আবহাওয়ায় এটি ৯০ শতাংশ সফল। অন্যদিকে স্কাই হান্টার হল আয়রন ডোমের মার্কিন সংস্করণ যা রায়থিয়ন ও রাফালে যৌথভাবে গড়ে তুলেছে।
কাজ শুরু করার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে হামাসের ছোড়া অন্তত ১২০০ রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেয় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ওই সমস্ত রকেট ইসরায়েলের জনবহুল অঞ্চল লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর না থাকলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারত সে সময়।
হামাসের আক্রমণের হাত থেকে নাগরিকদের নিরন্তর সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিরক্ষ ব্যবস্থা। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ৯০ শতাংশ লক্ষ্য নির্ভুল। যার অর্থ এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের বুকে আঘাত হানার জন্য যতগুলি রকেট ছোড়া হয়েছে তার ৯০ শতাংশকে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে আয়রন ডোম।
আয়রন ডোম তার আশেপাশে নূন্যতম ৪ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে পারে।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এর ক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। ৭০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সীমা ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে চলেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন