করোনায় ভারতীয়দের মৃত্যুতে খুশির কিছু নেই


করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় ভারত আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। তাদের এ দুর্দশা দেখে আমাদের উচ্ছ্বসিত হবার কিছু নেই। ভারত মুসলমানদের সঙ্গে দুশমনি আচরণ করেছে সেহিসেবে আজকে দুর্দিনে তাদের নিয়ে উপহাস বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য কাম্য হতে পারে না। ইসলামের শিক্ষাও এটি নয়। নগরে আগুন লাগলে মসজিদ-মন্দির কিছুই অক্ষত থাকে না। আজ চিতায় গোলাপী ও লাল রংয়ের আলো দেখে প্রশান্তির কিছু নেই।আমাদের কষ্ট পাওয়া উচিত এজন্য যে তাদের আলোর পথে আনতে, হেদায়েতের পথে আনতে আমরা যথেষ্ট মেহনত করতে পারিনি। আমাদের ব্যর্থতা এজন্য যে তারা কালেমা মুখে না নিয়ে মৃত্যু বরণ করছেন।ইসলামের বাণী তাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারিনি বলে । এজন্য তাদের মৃত্যুতে অনুতপ্ত হওয়া উচিত। ইসলামে সব মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবীয় আচরণ প্রদর্শন অন্যতম শিক্ষা। কারণ মানুষ হিসেবে সবাই সমান। আল্লাহ সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন।রাসুলুল্লাহ (সা) মানুষকে সৃষ্টির সেরাজীব হিসেবে সম্মান করেছেন। হোক সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম, কাফির, ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান হাদিসে এসেছে, একদিন সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) ও কায়েস ইবনে সাদ (রা.) কাদেসিয়াতে বসা ছিলেন। তখন তাঁদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে কিছু লোক অতিক্রম করল। তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁদের বলা হলো, লাশটি অমুসলিমের। তাঁরা বলেন, মহানবী (সা.)-এর পাশ দিয়ে একসময় একটি লাশ নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হলো, এটা তো এক ইহুদির লাশ। তখন তিনি বলেন, ‘তা কি প্রাণ নয়?’ (বুখারি, হাদিস - ১২৫০)।
অমুসলিমের প্রতি অন্যায়ভাবে অত্যাচার-নির্যাতন এমনকি খারাপ আচরণও করা যাবে না। কেননা দুনিয়া বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। আর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব হলো সবার সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করা। এ কারণেই প্রিয় নবি (সা) এ মর্মে সতর্ক করেছেন যে-‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেক, যদিও সে কাফির হয়। কেননা কোনো মাজলুমের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে পর্দা থাকে না।’ (মুনাদে আহামদ)ভারতে গুজরাট দাঙ্গা, দিল্লি দাঙ্গা, মুসলিম নিধনে সব অমুসলিম জড়িত নয়। সুতরাং আজকের ভারতের দুর্দিনে তাদের কষ্টে আমাদের খুশি হওয়া অনুচিত। আল্লাহ বলেছেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি ও তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন’। (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৮)
আমরা মুসলিম বিদ্বেষীদের জন্য খাস দিলে দোয়া করতে পারি যাতে আল্লাহ তাদের হেদায়েত নসিব করেন। এজন্য সাধ্য মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, সেবা শুশ্রুষা করতে পারি। পরবর্তীতে যেন তাদের মনে ইসলামের প্রতি কঠোরতার বদলে কোমলতা প্রকাশ পায়।হজরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন এক ইয়াহুদি গোলাম রাসুলুল্লাহ (সা)'র খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা) এই বলে বের হলেন- আল্লাহর শুকরিয়া যে, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল