ভারতে কোরআনের ২৬ আয়াতের বিরুদ্ধে রিট ও কিছু কথা
#মো.আবু রায়হান
এবার কোনো অমুসলিম নয়, নামধারী মুসলিম ভারতের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভী কোরআনের ২৬টি আয়াতের ওপর আপত্তি তোলে পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে রিট করেছে। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ২৬টি আয়াত উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের তিন খলিফা হযরত আবু বকর, হযরত ওমর এবং হযরত ওসমান কোরআনের মধ্যে ঢুকিয়েছেন। ক্ষমতা সুসংহত করতেই তারা এ কাজ করেছেন বলে রিটে উল্লেখ করা হয়। এই আয়াতগুলোতে মানুষকে সহিংস জিহাদে উৎসাহিত করা হয়েছে। কত বড় বুকের পাটা ওই কুলাঙ্গারের! যে কাজটি অমুসলিমরা করতে গিয়ে চৌদ্দবার ভাবে। সেখানে মুসলিম নামধারণ করে এই ইহুদি খ্রিস্টানদের এজেন্ট ওদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের দুঃসাহস পায় কোথায়? আল কোরআন যার হেফাজত বা সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিম্মাদারিতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং অবশ্যই আমিই তা সংরক্ষণ করব।’ (সুরা-হিজর, আয়াত -৯)।এই রিট শুধু মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে, ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কিন্তু আলটিমেটলি কুরআনের মহিমা ও নুরকে নির্বাপিত করা যাবে না। বিগত চৌদ্দশ বছর ধরে কুরআনের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্রকারীরা নর্দমায় নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের সুর ধারা, বাণী অবিকল অবিকৃতভাবে প্রবাহমান।
প্রায় ১৪ শত বছর আগের তুলির সাহায্যে লেখা আর বর্তমান কম্পিউটার যুগের কোরআনের মধ্যে বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। এমন উদাহরণ আর কী আছে? নিশ্চয়ই নেই।বিশ্বে কোরআনের সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি সংখ্যক হাফেজ রয়েছেন যারা সিনায় কুরআন ধারণ করে রেখেছেন। কোরআন ব্যতীত এমন নজির আর আছে কি? এটা আল্লাহর কালাম কোরআনের অলৌকিকতা আর কী হতে পারে? পৃথিবীর সমস্ত ছাপা কোরআন, রেকর্ড, ক্যাসেট, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি ধ্বংস করে ফেললেও এর কপি হাফেজদের কাছ থেকে সহজেই পাওয়া যাবে। এ কিতাবে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই।’ মানুষের লেখা কোনো একটি গ্রন্থের শুরুতে এভাবে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস করেনি কোনো লেখক। বরং প্রত্যেক গ্রন্থকার বইয়ের শুরুতে উল্লেখ করে দেন, ‘ভুলত্রুটি মার্জনীয়, কোনো পাঠক ভুল-ত্রুটি পেলে অনুগ্রহ করে আমাদের জানালে পরবর্তী সংস্করণে তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো।’ অর্থাৎ মানুষের কোনো কাজ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, এটাই স্বাভাবিক।
পৃথিবীর বহু পণ্ডিত পবিত্র কোরআনের খুঁত ধরতে এসে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন প্রতিদিন। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে রোজ এমন ঘটনা ঘটছে।কোরআন নাজিলের সময়কালে আরবের কবিরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিল, কোরআনের মতো তারাও নিখুঁত বাণী লেখতে সক্ষম। আল্লাহ তায়ালাও তার রাসূল (সা.)-এর কাছে অহির মাধ্যমে জানান, ঠিক আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি আমার বান্দার ওপর যা নাজিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাকো, তবে তোমরা তার মতো একটি সূরা (বানিয়ে) আনো।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২৩)। ‘তারা বলে, সে এটা রচনা করেছে? তুমি বলো, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পারো ডেকে আনো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা হুদ আয়াত -১৩)।
কিন্তু আরবের সব কবি একসঙ্গে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলতে বাধ্য হন, এ হলো আসলেই মহান আল্লাহর বাণী।
কোরআনে কারিম যে আল্লাহর বাণী তা বহুভাবে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীর কোনো পণ্ডিত এতে সামান্যতম ভুল খুঁজে পাননি, পাওয়ার উপায়ও নেই।
এই কোরআন শুধু মুসলিমদের নয়, এটা সমগ্র মানবজাতির এক মহাসম্পদ। এর আলোয় আলোকিত হওয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক মানুষের। এ কিতাব শুধু মুসলিমরাই পড়বে- এমন নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই এ কিতাব নির্দ্বিধায়-নির্বিঘ্নে অধ্যয়ন করতে পারেন। পারেন এর মর্ম উপলব্ধি করতে।
কোলকাতার চাঁদমল চোপরা ১৯৮৫ সালের ২৯শে মার্চ কোলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন (রীট পিটিশন) দাখিল করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল যে কুরআনের প্রকাশনা ভারতীয় দণ্ডবিধির অনুচ্ছেদ ১৫৩এ এবং ২৯৫এ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ কুরআন “হিংসায় ইন্ধন দেয়, সার্বজনীন শান্তিভঙ্গ করে, আপন ধর্মমতের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা এবং বিদ্বেষের বাতাবরণ সৃষ্টি করে, এবং ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অপমান করে।” ফৌজদারী কার্যবিধির অনুচ্ছেদ ৯৫ অনুযায়ী, তিনি আদালতের কাছে দাবি করেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কারণ দর্শাতে বলা হোক যে কেন কুরআনের মুদ্রিত প্রত্যেকটি প্রতিলিপি, তা মূল আরবী ভাষাতেই মুদ্রিত হোক বা অন্য যে কোন ভাষাতেই হোক, বাজেয়াপ্ত করা হবে না।কিন্তু এই রিট কোরআন বাজেয়াপ্ত তো করতেই পারেনি বরং মানুষকে আরো বেশি কোরআনমুখী করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পুরোপুরি উদ্ভাসিত করবেনই, যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে। (সুরা তাওবা, আয়াত -৩২)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন