কুরআনের সুরের পাখি নূরীন মুহাম্মদ সিদ্দিক
#মো. আবু রায়হান
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৯০৩)বিশ্বের একেক অঞ্চলে একেক ধরনে কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। তার মধ্যে আফ্রিকান ধরন অনন্য।মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও এই বিশাল মুসলিম বিশ্বের ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা অনুসারে এই তেলাওয়াতের ভিন্নতা থাকে। সেই ভিন্নতা স্বরে, সুরে ও ধরনে।
নূরীন মুহাম্মদসিদ্দিক গত শতাব্দীতে ৯০-এর দশকে আফ্রিকার মুসলিম দেশ সুদানের খার্তুমের পশ্চিমে আল-ফারাজাব গ্রামের একটি মাদ্রাসায় কুরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।পরে যখন রাজধানী খার্তুমে চলে আসেন, শহরের কয়েকটি বড় বড় মসজিদের নামাজে তিনি ইমামতি করেছেন এবং সেসময় তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।Sheikh Noreen Mohammad Siddiq (1982–2020) was a Sudanese imam who was popular for his recitations of the Quran. He served as an imam for several mosques in Khartoum.
তিনি যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন, সারা বিশ্বের মানুষ তার কণ্ঠে খুঁজে পেত বিষাদ, হৃদয় স্পর্শ করা আবেগ।রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের পাঠকদের মধ্যে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ সর্বোত্তম, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় যে সে কাঁদছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৯)
ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করার পর নূরীন মুহাম্মদ সিদ্দিকের নাম দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।তার অনন্য কণ্ঠস্বর তাকে মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় সব ক্বারিদের একজনে পরিণত করেছিল।মুসলিম বিশ্বের কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশের গ্রামীণ এলাকায় কুরআন পাঠের বিষয়ে আরো কিছু ধারা প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুদানের আল-দুরি। কুরআন তেলাওয়াতের সময় সিদ্দিক বেশিরভাগ সময় এই ধারা অনুসরণ করতেন।গত বছরের নভেম্বর মাসে সুদানে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৮ বছর বয়সী নূরীন মুহাম্মদ সিদ্দিক যখন নিহত হন তখন পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সেই শোক ছড়িয়ে পড়েছিল।
কোরআন শরিফ সুন্দর কন্ঠে পড়া প্রশংসনীয়। হাদিস শরিফে সুন্দর কন্ঠে পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সুললিত কন্ঠে কোরআন শরিফ পড়, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ২১৪১
তবে গানের সুরে কুরআন তেলাওয়াত নয়। এটা বরং কুরআন অবমাননার শামিল হওয়ায় তা বর্জনীয়। এমনকি গানের সুরে পড়তে গিয়ে হরফ কমবেশি হলে বা এক হরফের স্থলে অন্য হরফ আদায় করা হলে লাহনে জলি হবে এবং এতে অর্থ বিগড়ে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/৬৩৩) হযরত হুযাইফা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কুরআনকে আরবি সুর ও লাহানে পড়, ফাসেক ও পাপাচারীদের সুরে পড়ো না। শীঘ্রই এমন এক দল বের হবে যারা গান ও বিরহের সুরে কুরআন পড়বে, অথচ তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না, তারা খুবই রুগ্নআত্মা হবে। -আল মুজামুল আওসাত, তাবরানি, হাদিস: ৭২২৩কুরআন যথাসাধ্য সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত। সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াতের প্রতি ইসলামি শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং তা সুন্নত। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা শ্রুতিমধুর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করো। ’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৬৮)
নূরীন মোহামেদ সিদ্দিকের কুরআন তেলাওয়াতের লিঙ্ক
১. https://youtu.be/XeIFs6E6Xkc
২. https://youtu.be/rI7X2WGEGWc
৩. https://youtu.be/6Egs0COGQhw
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন