মুজাদ্দিদে আলফেসানির সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে ৭ দফা
#মো. আবু রায়হান
সম্রাট আকবর ইসলাম ত্যাগ করে ১৫৮২ সালে দ্বীনে-এলাহি নামে একটি নতুন ধর্ম প্রচার করেন। যদিও প্রচার করা হয়, এই নতুন ধর্মে সব ধর্মের ভালো দিকগুলো সংযোজন করা হয়েছে। দ্বীনে এলাহির মূল উপাদান ছিল অগ্নিপূজা, সূর্যপূজা, দরবারে প্রবেশ করতে তাঁকে সম্মানি সিজদা করা, নামাজ পড়তে নিষেধাজ্ঞা, পর্দা রহিতকরণ, সুদ-ঘুষ এবং জুয়ার বৈধতা, গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা, অনৈসলামিক দিবসের প্রচলন, শূকর হালাল বলে ঘোষণা, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি, ব্যভিচারের সাধারণ অনুমতি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর পরিবর্তে কালেমা হিসেবে আকবর খলিফাতুল্লাহর ব্যাপকহারে প্রচলন। এগুলোই ছিল দ্বীনে এলাহির মৌলিক উপাদান। এটাকে হিন্দুধর্মের নতুন সংস্করণ ছাড়া আর কীই বা বলা যায়? মুসলিম উম্মাহ তখন অত্যন্ত নাজুক মুহূর্তে অতিক্রম করছিল। উম্মাহর এমন ক্রান্তিকালে ধর্মদ্রোহিতার প্রতিরোধে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লেন টগবগে যুবক আহমদ সিরহিন্দী। ইতিহাসের এ মহান কিংবদন্তি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের সিরহিন্দে ১৫৬৪ সালে শুক্রবার রাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাখদুম শায়খ আবদুল আহাদ (রহ.) ছিলেন প্রখ্যাত সুফি শায়খ আবদুল কুদ্দুস গঙ্গোহী (রহ.)-এর শীর্ষ খলিফা। তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর ২৮তম অধস্তন বংশধর। শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ)-কে তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ ও খেদমতের কারণে মুসলিম উম্মাহ উপাধি দিয়েছে মুজাদ্দিদে আলফেসানি (দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মহান ধর্ম-সংস্কারক)। একটি হাদিসে আছে, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ এই উম্মাহর জন্য প্রতি শতাব্দীর সূচনালগ্নে এমন একজন ব্যক্তিকে পাঠাবেন, যিনি এই শতাব্দীর জন্য দ্বীনের সংস্কারমূলক কাজ করবেন। (আবু দাউদ শরিফ, তিবরানি, বায়হাকি) আগে এক শ বছরের জন্য একজন মুজাদ্দিদ আসতেন। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের পর উম্মাহকে ধর্মদ্রোহিতার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতেচ ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তখন সম্রাট আকবরের দ্বীনে এলাহির প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত তুঙ্গে। ১৬০৫ সালে সম্রাট আকবরের মৃত্যু ঘটে। এরপর ক্ষমতায় সমাসীন হন আকবরপুত্র জাহাঙ্গীর। তখন মুজাদ্দিদে আলফেসানির বয়স ৪৩ বছর। নতুন সম্রাট আকবরের দ্বীনে এলাহি যে হালে পানি পায়নি, তা তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দেখলে বোঝা যায়। দ্বীনে এলাহি গ্রহণ করেছিল মাত্র ১৮ জন । জাহাঙ্গীরের শাসনামলের শুরুর দিকে তাঁর সংস্কার আন্দোলন পুরো দেশেই হইচই ফেলে দেয়।
মুজাদ্দিদে আলফেসানি সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১. সম্রাটকে সম্মানি সিজদা করার কুপ্রথা রহিত করতে হবে। ২. গরু জবাইয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. সম্রাট ও তাঁর সভাসদদের প্রথম তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। ৪. শরিয়াহ বিভাগ আবার প্রতিষ্ঠা করে কাজির পদ পুনর্বহাল করতে হবে ৫. সমাজে প্রচলিত সব ধরনের কুসংস্কার ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। ৬. ভগ্ন ও বিধ্বস্ত মসজিদগুলো সংস্কার করে সেগুলো আবাদ করতে হবে। ৭. আকবরের যাবতীয় ইসলামবিরোধী আইন পুরোপুরি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। সম্রাট তাঁর এসব দাবি মেনে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এ মর্মে শাহী ফরমান জারি করেন। উপমহাদেশে ইসলামের ওপর চেপে বসা দ্বীনে এলাহির জগদ্দল পাথর অপসারণ করে ফের ইসলাম প্রতিষ্ঠা, তাঁর জীবনের এক অনবদ্য মহান কীর্তি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন