ফ্রান্সে ইসলামোফোবিয়া ও মুসলমানদের দিনকাল
মো আবু রায়হানঃ ফ্রান্সের সরকারী নাম ফরাসি প্রজাতন্ত্র।পশ্চিম ইউরোপে্র একটি রাষ্ট্র যারা একবিংশ শতাব্দীতেও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশিক শাসন পরিচালনা করছে উপনিবেশ করা দেশগুলোর টাকায় এরা ধনী হয়েছে।মূল ভূখণ্ডের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রান্সের উপনিবেশ রয়েছে, যেগুলো বেশির ভাগই প্রাক্তন ফরাসি সাম্রাজ্য থেকে পাওয়া।ফ্রান্স মোটামুটি ষড়ভুজাকৃতির।ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ, পূর্বে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি, দক্ষিণ-পশ্চিমে স্পেন, উত্তর-পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে উত্তর সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে ভূমধ্যসাগর। আটলান্টিক মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর, আল্পস পর্বতমালা ও পিরিনীয় পর্বতমালা-বেষ্টিত ফ্রান্স বহুদিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের মাঝে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও ভাষিক সংযোগসূত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।ফ্রান্সের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হচ্ছে প্যারিস। প্যারিস কে বলা হয় দা সিটি অব লাভ ।
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল ফ্রান্স। ফ্রান্স শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফ্রান্সিয়া থেকে এসেছে। এর অর্থ ল্যান্ড অব ফ্রান্স বা ফ্রাংকদের ভূমি।মধ্যযুগে ডিউক ও রাজপুত্রদের রাজ্যগুলি একত্র হয়ে একটিমাত্র শাসকের অধীনে এসে ফ্রান্স গঠিত হয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। এরপর বহু দশক ধরে ফ্রান্স রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। এরপর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফ্রান্স একটি সুসংহত প্রশাসনিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে।বর্তমানে ফ্রান্স এর পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর এই প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার উত্থান এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়ন এই নতুন ফ্রান্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান সদস্য। ফ্রান্স জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য-দেশের একটি এবং এর ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে।৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০১ বর্গকিলোমিটা্র আয়তনের ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র; রাশিয়া ও ইউক্রেনের পরেই এর স্থান এবং পৃথিবীর মধ্যে ৪৮ তম দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র।২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখেরও অধিক।সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ফ্রান্স। ২০১৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, দেশটির ৫১ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্ম পালন করে। মুসলমান ও অন্যান্য আরও কিছু ধর্ম পালন করে ৯ শতাংশ মানুষ। এছাড়া প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো প্রকার ধর্ম পালন করে না।মুসলিম জনসংখ্যা হচ্ছে ৬মিলিয়নের ও বেশি। মার্কিন গবেষণা কেন্দ্র পিউ রিসার্চের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৮ শতাংশ মুসলমান৷পিউ রিসার্চ সেন্টার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ফ্রান্সে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লাখ হবে। গবেষণা কেন্দ্র "পিউ রিসার্চ সেন্টার" ইউরোপে মুসলমানদের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করেছে। প্রথম দৃশ্যকল্পটি "শূন্য অভিবাসন" মোডে অঞ্চলের মুসলমানদের সংখ্যাকে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় দৃশ্যকল্প, বৈধ ইমিগ্রেশন শাসনব্যবস্থায় এবং তৃতীয় অবস্থানে, ২০০১থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইউরোপীয় মহাদেশে প্রবেশ করে আইনি এবং অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশের জন্য ভিত্তি প্রদান করে। বিবেচনা করা হয়েছে।ফ্রান্সে মুসলমানদের সংখ্যা গত বছর ছিল ৫৭ লাখ, বা মোট জনসংখ্যার ৮.৮ শতাংশ। কেন্দ্র অনুযায়ী, যা শূন্য অভিবাসনে আট বছর পরে মুসলমানদের সংখ্যা ৮৬ লাখ বৃদ্ধি আশা করা যায়।দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, গবেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে মুসলমানদের সংখ্যা ১৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে যা ১ কোটি ২৬ লাখের সমান এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ এবং ১ কোটি ৩২ লাখের মধ্যে পৌঁছাবে।প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে অনেক কম।ফ্রান্সে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির ভাষা ‘ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি’। এখানকার ৯০ শতাংশের অধিক মানুষ ফরাসি ভাষাতে কথা বলে। তাছাড়া বাস্ক, ব্রেটন, কাতালান, কর্সু, আরপিটান, অক্সিটান, আলসাটান ইত্যাদি ভাষাগুলোকে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফ্রান্সে বহিরাগত অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আরবি, আর্মেনীয়, ইতালীয়, কাবিলে, পর্তুগিজ, তুর্কি এবং ওলোফ প্রচলিত। জিপসি বা রোমানিও প্রচলিত রয়েছে দেশটিতে।
প্যারিস গ্র্যান্ড মসজিদ |
ফ্রান্স আধুনিক বিশ্বের শক্তিশালী দেশ সমূহের একটি।ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর আগমন এখানে কয়েকটি ধাপে হয়েছে।অষ্টম শতকে স্পেন বিজয়ের পর থেকে ফ্রান্সে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের সাথে মূলত ফ্রান্সে ইসলামের আগমনের সেতুবন্ধন হয়েছে।After their conquest of Spain, Muslim forces pushed into southern France. They were defeated at the Battle of Tours in 732 but held Septimania until 759.In the 9th century, Muslim forces conquered several bases in southern France, including Fraxinet. They were expelled only in 975. During the winter of 1543–1544, after the siege of Nice, Toulon was used as an Ottoman naval base under the admiral known as Hayreddin Barbarossa. The Christian population was temporarily evacuated, and Toulon Cathedral was briefly converted into a mosque until the Ottomans left the city.After the expulsion of the Moriscos from Spain in 1609–1614, about fifty thousand Moriscos entered France, according to the research of Henri Lapeyre.স্থায়ীভাবে মুসলমান ও ইসলামের বৃক্ষের জড় গেঁথেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেখানে ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন।মুসলমান মারা গেছেন অগনিত।এই মুসলমানরা বেশির ভাগই আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কো থেকে এসে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বসতি স্থাপন করেছেন। সংখ্যায় মুসলমানরা কম হলেও জার্মানির আক্রমণ থেকে ফ্রান্সের ভূখণ্ড রক্ষায় প্রথম মহাযুদ্ধে প্রায় ৩৮ হাজার মুসলমান ফ্রান্সের জন্য জীবন দিয়েছে। এই যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী মুসলমানদের সম্মানে ফ্রান্সের সরকার ১৯২৬ সালে প্যারিসে গ্র্যান্ড মসজিদ স্থাপন করে। ধারণা করা হচ্ছে, অমুসলিম এই ফ্রান্সের এটিই প্রথম মসজিদ, যা এখনো মুসলমানদের আত্মত্যাগের সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান। ফ্রান্সে ইসলামের ইতিহাস পুরাতন হলেও প্যারিস বড় মসজিদ ও তার দাওয়াতি কার্যক্রম এখানে ইসলামের নবদিগেন্তের সূচনা হয়।ফ্রান্সের মুসলমান ও ইসলামের সূর্যোদয় ছিলো মানবতার কল্যাণে।তাই এখানকার মুসলমানদের রয়েছে এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। ১৯২০ সালের ১৯ আগস্ট ফ্রান্স সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ লাখ ফ্রাংকের (দেশীয় মুদ্রা) বিল পাস করে। প্যারিস নগরীর পুরনো হাসপাতালের কাছে এক হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের সুবিধা রেখে একটি মসজিদ, গ্রন্থাগার, মাদরাসা ও কনফারেন্সরুম নির্মিত হয়। ১৯২২ সালের ১৯ অক্টোবর ঠিক দুপুর ২টায় ফ্রান্স সরকার ও মুসলিম বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রীয় অতিথির উপস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মাউরিস ট্রানচান্ট ডি লুনেলের নেতৃত্বে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ১৯২৬ সালের ১৫ জুলাই শায়খ আহমাদ আল আলাওয়ি (১৮৬৯-১৯৩৪) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গাস্টন ডোমারগোর উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম নামাজের ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করেন। বিস্ময়ের কথা হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মসজিদটি উত্তর আফ্রিকান ও ইউরোপিয়ান ইহুদিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজে আসে। হিটলার বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে এসে ইহুদিরা আত্মগোপন করে থাকত। এমনকি মসজিদ কমিটি তাদের জন্য ভুয়া মুসলিম জন্মনিবন্ধন কার্ডও তৈরি করে দিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া ইহুদিদের নির্দিষ্ট সংখ্যার হিসাব পাওয়া না গেলেও আনুমানিক বলা যায়, তাদের সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ পর্যন্ত পৌঁছেছিল; বরং এর চেয়েও বেশি। প্যারিসের এই গ্র্যান্ড মসজিদ ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে বিবেচিত। মসজিদটি পুরো ফ্রান্সে ধর্মীয় ও সামাজিক অনেক অবদান রেখে চলছে।
বর্তমানে ফ্রান্সে ৩০০০হাজার মসজিদ আছে।পাঁচ শতের বেশি রয়েছে শুধু প্যারিস শহরে।There are currently about 2,300 mosques in France with a further 200 to 250 planned.ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ ও মসজিদ কেন্দ্রিক মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের অধিক।ফ্রান্স সরকারি ইসলামিক ইনস্টিটিউট মাত্র ৩৬টি।ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় একে বারে কম। গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১০০ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামাজকেন্দ্র তৈরি হয়েছে।ইফপ’ নামের এক সংস্থার জরিপ বলছে, ফ্রান্সের ৪০ শতাংশের বেশি মুসলমান ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন৷২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা এবং অতি সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলায় এদেশের মুসলমানদের জীবনধারা আরো নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।মুসলমান নারীদের জন্যে কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধান করা আইন করে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকুরিতে এদের অবস্থান চোখে পড়ার মতো না হলেও পর্যটন হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁয় এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ফ্রান্সে অবস্থানরত বিভিন্ন কোম্পানিতে অনেক মুসলমান কাজ করে থাকে। প্যারিসে আফ্রিকান বেশ কিছু মুসলমানকে তরকারি, সামুদ্রিক মাছ বিক্রির ব্যবসায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে হিজাব পরিধান করা নিষিদ্ধ হলেও রাস্তাঘাটে চলাফেরায় বা বড় বড় বিপণী বিতানে যাওয়া আসায় হিজাব পরায় কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু জন্মগতভাবে কোনো মুসলিম ফরাসি নারী হিজাব পরে না। বিয়েশাদির ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মতো শরিয়া আইন মেনেই সম্পন্ন করা হয়। পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ে ছেলেমেয়েদের ইচ্ছাই এখানে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ম্যারিজ মিডিয়া অর্থাৎ ওকালতির মধ্যেও বিয়েশাদি সম্পন্ন হয়ে থাকে।এখানকার মুসলমানরা রাজনৈতিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। ফুটবলসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন খেলাধুলায় মুসলমানদের নেতৃত্ব ও প্রাধান্য থাকলেও জাতীয় ও সিটি গভর্নম্যান্ট পরিচালনায় এদের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে।
এমানুয়েল মাক্রোঁ |
১৫এপ্রিল ২০১৮ ভাষণে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন,ইসলাম হচ্ছে ফ্রান্সের দ্রুত অগ্রসরমান এক মাত্র ধর্ম,যা খুবই দ্রুততার সাথে বিস্তার লাভ করছে।মুসলিম এই জনগোষ্ঠীর রীতিনীতির সাথে এদেশের জনগণ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।সত্যিকারের মুসলিম র্যাডিকাল হয় না।তারা সন্ত্রাসী নন।আসলে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জুড়ে দেওয়া এটি ইসলামোফুবিয়া।গত ৪ জানুয়ারি মাক্রোঁ বলেছেন তিনি ফ্রান্সের মুসলমানদের ঢেলে সাজাতে চান।মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো সাংগঠনিক নেতৃত্ব তৈরি,ইমামদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ ২ অক্টোবর ২০২০ ইসলাম ধর্ম নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দেন। সংবাদসংস্থা এএফপি অনুযায়ী, মাক্রোঁ ইসলামকে এমন এক ধর্ম বলেছেন, যার ফলে গোটা বিশ্ব আজ সঙ্কটে। উনি ফ্রান্সে একটি ভাষণে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলেছেন। জানিয়ে দিই, এটাই প্রথমবার না যে এমানুয়েল মাক্রোঁ ইসলাম ধর্ম নিয়ে এরকম মন্তব্য করলেন। এর আগেও তিনি ইসলাম ধর্ম দ্বারা কট্টরতা আর হিংসা ছড়ানো হয় বলেছিলেন।প্রায় আট মাস আগে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ দেশে বিদেশী ইমামদের প্রবেশ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সেই সময় এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছিলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কট্টরপন্থী আর আলগাওবাদকে দেশে প্রভাব ফেলার থেকে রোখার জন্য নেওয়া হয়েছে। উনি এও জানিয়েছিলেন যে, ফ্রান্সে যেই ইমামরা রয়েছেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষা ফ্রেঞ্চ শেখা অনিবার্য। উনি বলেছিলেন যে, ফ্রান্সে থাকা ইমামদের কড়া নিয়ম পালন করতে হবে। উনি এও জানিয়েছিলেন যে, ইমামদের কারণে দেশে কট্টরপন্থী আর আলগাওবাদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আমরা ইসলামিক কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে।কেন বাড়ছে এই ইসলামবিদ্বেষ ডানপন্থী আন্দোলনের প্রভাব বৃদ্ধির ফলেই পুরো ইউরোপজুড়ে ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে। আঙ্কারাভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংকের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ফাউন্ডেশন ফর পলিটিক্যাল, ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রিসার্চ (এসইটিএ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইউরোপীয় ইসলামোফোবিয়া : রিপোর্ট ২০১৮’ ইউরোপে মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদের উত্থানকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে, এমন কিছু কারণের ওপর আলোকপাত করেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার, বহুসংস্কৃতিবাদ এবং ইউরোপের রাষ্ট্রীয় আইনের ক্ষেত্রে সবসময় মুসলিমবিরোধী আলোচনা করার কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে ইসলামফোবিয়া এবং মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদ। মুসলিম-বিরোধী এই বর্ণবাদের প্রজনন ও প্রতিপালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ইউরোপের গণমাধ্যম। ইউরোপের এমন খুব কম গণমাধ্যম আছে, যারা মুসলিমদের ইতিবাচক দিকগুলো ফুটিয়ে তোলে। বরং নেতিবাচকভাবেই মুসলিমদের তুলে ধরে সবসময়। আর ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রমাগত মুসলিমবিদ্বেষ তো আছেই।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মুসলমানদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদদের ইসলামোফোবিক ভাষা এবং ডানপন্থীদের বর্ণবাদী ভাষা ইসলামোফোবিয়াকে আরো বাড়িয়ে তুলছে এবং বিশ্বকে সন্ত্রস্ত করছে। এখন ইসলামোফোবিয়া কেবল মুসলমানদের নয়, ইউরোপের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও নির্বাচনী উদ্দেশ্যে তারা এই বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়াকেই উসকে দেয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন