জার্মানিতে মুসলিম ও তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ











মো.আবু রায়হানঃজার্মানি মধ্য ইউরোপ ও পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ।জার্মানি সরকারিভাবে সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী। ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এটি ১৬টি রাজ্য নিয়ে গঠিত । বার্লিন জার্মানির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।জার্মানির মোট আয়তন ৩,৫৭,০২২ বর্গকিলোমিটার যার মধ্যে ৩,৪৯,২২৩ বর্গকিমি ভূমি এবং ৭,৭৯৮বর্গকিমি জলভাগ। আয়তনের বিচারে জার্মানি ইউরোপের মধ্যে সপ্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৩তম।জার্মানির পূর্ব সীমান্তে পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সীমান্তে ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ড্‌স, উত্তর সীমান্তে ডেনমার্ক এবং দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড এবং অবস্থিত।জার্মানি উত্তর সীমান্তে উত্তর সাগর ও বাল্টিক সাগরের মাঝখানে এবং দক্ষিণে আল্পস পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত। দেশটির মধ্য দিয়ে ইউরোপের অনেকগুলি প্রধান প্রধান নদী যেমন রাইন, দানিউব, এলবে প্রবাহিত হয়েছে।জার্মানির ইতিহাস জটিল এবং এর সংস্কৃতি সমৃদ্ধ, তবে ১৮৭১ সালের আগে এটি কোন একক রাষ্ট্র ছিল না।১৮১৫ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত জার্মানি একটি কনফেডারেসি এবং ১৮০৬ সালের আগে এটি অনেকগুলি স্বতন্ত্র ও আলাদা রাজ্যের সমষ্টি ছিল। ১৮৭১ সালে অটোফন বিসমার্কের অধীনে একত্রিত হবার পর জার্মানিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ইউরোপে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চালালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯১৮ সালে যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ঘটলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এর উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ার ফলে নাৎসি পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি ১৯৩০-এর দশকে আডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৯ সালে জার্মানির আগ্রাসনের ফলে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বযুদ্ধ হয়।১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয় এবং দেশের সীমান্ত জোরদার করে।১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এই ঘটনাটিকে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতন ও জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে।
জার্মান ভাষা জার্মানির সরকারি ভাষা। এছাড়া অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরও অনেকগুলি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে আরবি, গ্রিক, ইতালীয়, কুর্দি এবং তুর্কি ভাষা উল্লেখযোগ্য। লুসাটিয়া অঞ্চলে সর্বীয় ভাষা এবং দক্ষিণ শ্লেসভিগ অঞ্চলে ডেনীয় ভাষার আঞ্চলিক সরকারি মর্যাদা রয়েছে। উপকূলীয় দ্বীপগুলিতে ফ্রিজীয় ভাষা প্রচলিত। জার্মানির পূর্ব সীমান্তে পোলীয় ভাষা এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ওলন্দাজ ভাষা প্রচলিত। এছাড়াও এখানে অনির্দিষ্ট সংখ্যক রোমানি ভাষাভাষী বাস করে।২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী জামানির জনসংখ্যা আট কোটি ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৫ জন। এখানে অনেক ধর্মের লোকই বসবাস করে। এর মধ্যে প্রটেস্ট্যান্ট ৩৪ শতাংশ, রোমান ক্যাথলিক ৩৪ শতাংশ, মুসলিম ৩.৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ২৮.৩ শতাংশ।ফ্রান্সের পর এখানে সর্বাধিক মুসলিম বসবাস করে বলে জানা যায়। CIA কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে জার্মানিতে মুসলমানের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪.৪ শতাংশ। যা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ।এ ছাড়া অন্য আরেকটি জরিপে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের বেশি নাগরিক মুসলমান। গণনায় তা ৪.৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। An estimate published in 2016 for 2015 calculated that there are 4.4 to 4.7 million Muslims in Germany (5.4–5.7% of the population). এদের প্রায় সবাই সুন্নি মুসলমান।Today, with roughly five million Muslims making up 6.1 percent of the population, Germany has the second largest Muslim population of any European Union country, following France. Just as church memberships—and church tax revenues—have been dwindling, Islam has become the country's fastest-growing religion. ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এখন জার্মানি হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে উর্বর ভূমি। দেশটিতে ইসলামের প্রচার-প্রসার বেশ দ্রুততার সঙ্গে ঘটছে। মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে চলছে উল্লেখযোগ্য হারে। জার্মান টেলিভিশনের হিসাব অনুযায়ী ২০০৬ সাল থেকে দেশটিতে প্রতিবছর চার হাজার জার্মানি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।
জার্মানিতে মুসলমানদের উত্থান ও ক্রমবৃদ্ধির কয়েকটি কারণ আছে।মুসলিম স্পেন মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন-চিন্তা ইত্যাদি তত্কালীন ইউরোপে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। তখনকার স্পেন ও জার্মানির মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কও বিদ্যমান ছিল। তার সূত্র ধরে ইসলামের সঙ্গে জার্মানির পরিচয়।জার্মানরা ক্রুসেড যুদ্ধের কারণে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানার সুযোগ পায়। এই যুদ্ধে স্পেন ও জার্মানির রাজাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল।৯৯৯ থেকে ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ইউরোপের মতো জার্মানিতেও প্রাচ্যবিদদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মার্টিন লুথার বিকৃত অনুবাদ সত্ত্বেও কোরআন অধ্যয়ন করেছিলেন। তখন প্রাচ্যবিদরা ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা শুরু করেন এবং তাঁদের কেউ কেউ ইসলামের সুমহান সাম্যনীতি, শিক্ষা ও মানবতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।১৮ শতকে উসমানি সালতানাতের সঙ্গে জার্মানির কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার সূত্র ধরেই জার্মানিতে মুসলিমদের আগমন ঘটে। Muslims first moved to Germany as part of the diplomatic, military and economic relations between Germany and the Ottoman Empire in the eighteenth century. Twenty Muslim soldiers served under Frederick William I of Prussia, at the beginning of the eighteenth century.জার্মানির ঐতিহাসিক লাল মসজিদটির নির্মাণকাল (১৭৮৯-১৭৯১ খ্রি.) থেকে অনুমান করা যায়, ওই সময় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জার্মানিতে বসবাস করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের হাতে অনেক যুদ্ধবন্দি ছিল। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। এদের মাধ্যমেও জার্মান নাগরিকরা মুসলমানদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। মুক্তির পর তাদের অনেকে জার্মানিতে রয়ে যায় এবং সেখানে জীবনযাপন শুরু করে। ষষ্ঠত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিছুসংখ্যক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জার্মানিতে গমন করে। এতে জার্মানিতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

২০১৫ সালে প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়ার পর, জার্মানিজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় ইসলাম৷ইউরোপে অব্যাহত অভিবাসন প্রত্যাশীদের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করার লক্ষ্যে জার্মানিতে ইসলাম বিদ্বেষী ‘পেগিডা’ আন্দোলন যাত্রা শুরু করে। পেগিডা আন্দোলনের জন্মভূমি নামে খ্যাত জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় ড্রেসডেন শহরে সবচেয়ে বড় ধরণের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক এবং স্লোভাকিয়ায় অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, ইউরোপে অভিবাসীদের স্বাগত জানাতে মহাদেশটির বিভিন্ন শহরে একই দিনে ‘পেগিডা’ বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।আলোচিত হয়ে আসছে যে ‘জার্মানি ইসলামের জন্য অনুকূল দেশ নয়’ কিংবা ‘ইসলাম জার্মানির অংশ হতে পারে না’।গবেষকের ভাষ্য অনুযায়ী, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ৬৬ শতাংশ ও পূর্বাঞ্চলে ৭৫ শতাংশ জার্মানির নাগরিক ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। ২০১০ সালের অক্টোবরে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল মন্তব্য করেছেন,জার্মানি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হতে খুব বেশি দেরি নেই। ৪০ থেকে ৫০ লাখ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ জার্মানিতে মসজিদ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হতে চলেছে। পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগা জার্মানিতে অধিক পরিমাণ মসজিদের উপস্থিতি মেনে নেওয়ার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদ
২০১৫ সালে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে যখন ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছিল, তখনো মার্কেল বলেছিলেন,‘ইসলাম জার্মানির অংশ।’ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স সিহোফার দেশটির বহুল প্রচারিত বিল্ড সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জার্মানিতে ইসলাম ধর্ম পালন করা সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ দেশে এই ধর্ম খাপ খায় না’তবে তাঁর এহেন বক্তব্য খণ্ডন করে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল আবারও মন্তব্য করেছেন, ইসলাম অবশ্যই জার্মানির অংশ।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্রান্স, ডেনমার্কের অধিবাসীদের তুলনায় জার্মানরা নতুন কোনো মসজিদ বা মিনার নির্মাণের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সোচ্চার? তাছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের সমানাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রেও কার্পণ্য লক্ষ করা যায় জার্মানদের মধ্যে? ইউরোপিয়ান মনিটরিং সেন্টার অন রেসিজম অ্যান্ড জেনোফোবিয়ার প্রধান বিট উইন্কলার-এর মতে, ইউরোপ এখন ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত। তাদের পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনকভাবে ফুটে উঠেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৮ শতাংশ জার্মানি উল্লেখ করেছেন, মুসলিমদের তারা উগ্র বলেই জানে।ইসলাম জার্মানিতে ‘এন্টিটি আন্ডার পাবলিক ল', অর্থাৎ সার্বজনিক আইন দ্বারা স্বীকৃত ধর্মীয় গোষ্ঠী নয়৷ এক্ষেত্রে মূল বাধা হলো জার্মানিতে ইসলামের বিভিন্ন ধারার অনুগামীদের উপস্থিতি- সুন্নি, শিয়া, আলাওয়াইট, আহমদি, সুফি, ইবাদি ও অপরাপর নানা সম্প্রদায়ের মুসলিম এখানে বাস করেন৷‘ইসলাম জার্মানির অংশ' – এই মন্তব্য করে প্রাক্তন জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ জার্মানিতে বসবাসকারী মুসলিম জনসাধারণের সহানুভূতি পেলেও সমাজের মূল স্রোতের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর এই কথায়৷ ভুল্ফ-এর উত্তরসূরি ইওয়াখিম গাওক, যিনি একজন প্রটেস্ট্যান্ট যাজকও, সরাসরি এই বাক্যটিকে গ্রহণ করতে চাননি৷ তাঁর মতে ইসলাম নয়, শুধু মুসলমানরা জার্মানির অংশ৷ প্রটেস্টান্ট ধর্মতত্ত্ববিদ পেট্রা বার-এর মতে এই বক্তব্য নিতান্তই সিম্যান্টিকস, অর্থাৎ একই কথাকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা৷ ইহুদি মিউজিয়ামের আলোচনা অনুষ্ঠানে, কোন ধর্ম জার্মানির অংশ? এই প্রশ্নের উত্তরে পেট্রা বার বলেন, ‘‘এটা খুব সহজই বলা যায়৷ সব জার্মানের ধর্মই জার্মানির অংশ৷ মুসলিমরা এই সমাজের অংশ, তাই ইসলামও৷ তাই এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করাটা আমার বোধগম্য হয় না৷ ইসলাম ছাড়া তো মুসলমান হওয়া যায় না৷''
ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট মিলিয়ে জার্মানির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী৷ সমগ্র জনসাধারণের এক তৃতীয়াংশ কোনো ধর্মের আনুসারী নয়৷ অর্ধশত বর্ষ আগেও চিত্রটা ছিল অনেকটা ভিন্ন রকমের৷ ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানী ডেটলেফ পোলাক জানান, গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে ৯০ শতাংশ মানুষ ছিলেন খ্রিষ্টান৷ আজ অনেক ধরনের ধর্মানুসারী দেখা যায় জার্মানিতে৷ তা সত্ত্বেও ৭০ শতাংশ জার্মান খ্রিষ্ট ধর্মকেই জার্মান সংস্কৃতির মূল ভিত বলে মনে করেন৷ জনসাধারণের অধিকাংশই ইসলামকে অপরিচিত বলে প্রত্যাখ্যান করেন৷ অন্যদিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে এক্ষেত্রে অনেকটা খোলামেলা মনোভাব লক্ষ্য করা যায়৷সমাজবিজ্ঞানী পোলাক-এর ভাষায়, ‘‘মুসলিমদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় জার্মানিতে বেশ কম৷ প্রাক্তন পশ্চিম জার্মানির ৩৪ শতাংশ ও প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ মুসলিমদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন বলে জানিয়েছেন৷ অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি জার্মানদের মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি ইতিবাচক৷ ভবিষ্যতে একজন মুসলমান জার্মানির খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল, সিডিইউর প্রধান এবং চ্যান্সেলর হতে পারেন বলে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন দলটির সংসদীয় দলের নেতা রাল্ফ ব্রিংকহাউস।জার্মানিতে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯১৫ সালে। ইসলামী আর্কাইভের তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ৩০০টির মতো মসজিদ রয়েছে। যার মধ্যে সব মিলিয়ে ১৪০টি মসজিদ রয়েছে স্বাভাবিক গুম্বুুজ ও মিনারসংবলিত।দুই হাজার ৬০০টির মতো নামাজঘর রয়েছে, যেগুলোকে ছোটখাটো মসজিদ হিসেবে গণ্য করা যায়। আরো প্রায় ১৮০টি মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ চলছে। জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ ডিশিসবুর্গ মার্কস্নোতে, এটি ২০০৮ সালের শুরুতে উদ্বোধন করা হয়।Some figures on mosques in the country do exist. The Central Council of Muslims in Germany announced in early October that there are roughly 2,500 mosques. Many of them are tucked away from the street in courtyards, around 900 would be recognizable as mosques to passersby. ১৯৯৭ সাল থেকে জার্মানির মসজিদগুলোতে বার্ষিক উন্মুক্ত মসজিদ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। যাতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য-শোভা তুলে ধরা হয় এবং বিভিন্নভাবে ইসলামের যথার্থতা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।জার্মানিতে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় ১৯৩২ সালে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে কয়েকটি করে ইসলামিক সেন্টার ও মাদরাসা রয়েছে।হামবুর্গে ইসলামিক সেন্টারের মতো মিউনিখ এবং আঁচে’তেও বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছে। জার্মানিতে তৎপর এইসব ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুরস্ক থেকে আসা মুসলমানরাই চালিয়ে থাকে। তুরস্কের ইসলামপন্থী দলগুলো সেদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে তারা তুরস্কের বাইরে চলে যায় এবং তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে। বিশেষ করে তারা ইউরোপের দিকে যেতে পছন্দ করতো। এভাবেই তারা জার্মানি চলে যায় এবং নিজ দেশে কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা জার্মানিতে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে। জার্মানির একজন খ্যাতিমান মুসলিমের নাম হলো মুরাদ বেলফার্ড হফম্যান। তিনি মরক্কোতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান হবার পর তিনি জার্মানির সমাজে ইসলামকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।জার্মানির প্রায় ১৬টি রাজ্যে শিক্ষকদের বোরকা ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল