ম্যান্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমান



মো আবু রায়হানঃ দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র । দেশটির দক্ষিণে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর সীমান্তে নামিবিয়া, বোতসোয়ানা ও জিম্বাবুয়ে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমানায় মোজাম্বিক ও এসওয়াতিনি (প্রাক্তন সোয়াজিল্যান্ড) রাষ্ট্রগুলি অবস্থিত। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র লেসোথোকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।১৫শ শতকের শেষভাগে আফ্রিকার সর্বদক্ষিণ বিন্দুতে পর্তুগিজরা একটি বসতি স্থাপন, যা ছিল অঞ্চলটির ইউরোপীয় উপনিবেশিকীকরণের সূচনা। ১৬৫২ সালে ওলন্দাজরা দক্ষিণ-পশ্চিমের উত্তমাশা অন্তরীপে একটি উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৭৯৫ সালে ব্রিটিশ সেনারা উত্তমাশা অন্তরীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ১৮০৬ সাল নাগাদ সমগ্র ওলন্দাজ উপনিবেশটিকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ৩১শে মে ১৯৬১ তে দেশটি নামমাত্র প্রজাতন্ত্র লাভ করে। সেসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের ভোট দানের অধিকার ছিল। ওয়েস্টমিনিস্টার সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যত ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হতেন।১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো জাত-পাত নির্বিশেষে নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস( এএনসি) বিপুল ভোটে জয়ী হয় ও বর্তমান কাল অবধি ক্ষমতাসীন রয়েছে।দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি রাজধানী আছে। প্রিটোরিয়া বা তশোয়ানে নির্বাহী রাজধানী, কেপটাউন আইন বিভাগীয় রাজধানী এবং ব্লুমফন্টেইন বা মানগাউং বিচার বিভাগীয় রাজধানী। দেশটির বৃহত্তম নগরী জোহানেসবার্গ, এছাড়া ডারবান ও পোর্ট এলিজাবেথ অন্যতম প্রধান কিছু নগরী। প্রশাসনিকভাবে নয়টি প্রদেশে বিভক্ত দেশটিতে একটি বহুদলীয় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।

দক্ষিণ আফ্রিকার আয়তন প্রায় ১২,২১,০৩৭বর্গকিলোমিটার। নৃতাত্ত্বিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বহু-গোষ্ঠীয় রাষ্ট্র, যেখানে বহু বিচিত্র সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের মেলবন্ধন ঘটেছে্‌। এ কারণে এটিকে রংধনু জাতি হিসেবেও ডাকা হয়। জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশ কৃষ্ণাঙ্গ বান্টু বংশোদ্ভূত লোক; এদের মধ্যে জুলু, খোসা, সোথো ও তসোয়ানা নৃগোষ্ঠীর লোক প্রধান। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ ৮%, মিশ্র জাতির লোক প্রায় ৯% ও দক্ষিণ এশীয় বা ভারতীয় ২% বংশোদ্ভূত লোকেরা জনসংখ্যার বাকী এক-পঞ্চমাংশ গঠন করেছে। দেশটির জনসংখ্যা ৫৯ মিলিয়ন। এটি বিশ্বের ২৪তম সর্বোচ্চ জনবহুল রাষ্ট্র। ২০১০ সালে অ্যাসোসিয়েশন অফ রিলিজন ডেটা আর্কাইভস ( Association of Religion Data Archives) অনুমান করেছিল যে ৮২.০% দক্ষিণ আফ্রিকান খ্রিস্টান, ৭.১% আদিবাসী, ৫.৪% অজ্ঞেয়বাদি , ২.৪% হিন্দু, ১ .৭% মুসলিম, ০.৩% বাহাই, ০.৩% বৌদ্ধ ও নাস্তিক, ০.২% ইহুদি ।২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি মোতাবেক (পিউ) ও সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের সংখ্যা এখন ১৫ লাখ। ২০২১ সালে প্রকাশিতব্য আদমশুমারির ফলাফলে মুসলমানদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।তবে মুসলমানদের সংখ্যা ২৫ লাখের অল্প কম। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩ শতাংশ। আফ্রিকায় ইসলাম ক্রমবর্ধমান রয়েছে। সব বর্ণ-সংস্কৃতির মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানের সংখ্যা ছয়গুণ বেড়েছে । ১৯৯১ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার। ২০০৪ সালে এসে এ সংখ্যা ৭৪ হাজার ৭০০-এ দাঁড়ায়। মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাদের শাসনামলে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার খনিগুলোতে কাজ করার জন্য মুসলিম কলোনিগুলো থেকে প্রচুর শ্রমিক নিয়ে যায় সেখানে। যাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ী হয়ে যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানরা কয়েকটি ধাপে এসেছে। প্রথম দফায় আফ্রিকা ও এশিয়া (মূলত ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ) থেকে দাস, রাজনৈতিক বন্দিদশা এবং রাজনৈতিক নির্বাসিতদের অনৈচ্ছিক অভিবাসনের অংশ হিসাবে আদি মুসলমানদের আনা হয়েছিল। যা প্রায় ১৬৫২ সাল থেকে ১৮০০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। In 1658 the first Muslims arrived in the Cape. They were slaves and political exiles from the islands of Indonesia and Malaysia, Bengal, the Malabar Coast and Madagascar. Amongst them were exiled leaders of the resistance against the Dutch colonisers .দ্বিতীয় ধাপটি ছিল ১৮৬০থেকে ১৮৬৮ এর মধ্যে নাটালের চিনিকল-বেত ক্ষেতগুলিতে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ ভারত থেকে আগত শ্রমিকদের আগমন, এবং আবার ১৮৭৪ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত। নাটাল প্রদেশে স্থানান্তরিত সমস্ত ধর্মের প্রায় ১৭৬,০০০ ভারতীয়দের মধ্যে, প্রথম চালানের প্রায় ৭-১০% মুসলমান ছিল। In 1860, Indian plantation workers, independent merchants and traders from Calcutta, Madras, Bombay and Gujarat arrived in Natal and Transvaal, the northern and eastern parts of South Africa. তৃতীয় ধাপে আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল, মূলত মালাউই এবং জাঞ্জিবার থেকে এসেছিল। তবে, অভিবাসন কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের বিকাশে অবদানই নয়, ইসলাম ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত মালয় জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আকর্ষণীয় ধর্ম হিসাবে পরিণত হয়েছিল। উনিশ শতকে যথেষ্ট পরিমাণে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ১৯৭০র দশকের শেষের দশক এবং ১৯৮০র দশকের গোড়ার দিকে বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ইসলামকে গ্রহণ করেছিলেন যে, সমস্ত মানুষের সমতার বিষয়ে একটি স্পষ্ট বক্তব্য সহ ইসলামকে একটি অ-সাদা, অ-খ্রিস্টান এবং অ-নিপীড়ক ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করে, একটি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের ধারণাকে উত্সাহিত করতে পারে। তবে বাকিদের তুলনায় এদের অনুপাত নগণ্য।চতুর্থ ধাপে ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদ শেষ হওয়ার পরে আফ্রিকান মুসলমানদের আরেকটি তরঙ্গ চিহ্নিত হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলিতে এই অভিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৭৫,০০০ থেকে ১ লক্ষের কাছাকাছি। এছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান যারা অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসাবে আগমন করেছেন।যদিও মুসলমানদের বেশিরভাগই সুন্নি, তবে অল্প সংখ্যক শিয়া এবং বিশেষত কেপটাউনে আহমাদিয়ারা রয়েছে।
অন্যমতে,আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর পূর্বে স্পেন থেকে বিতাড়িত হলো একটি মুসলিম পরিবার। অথৈ সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের আশ্রয় হলো দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে।অভিবাসী এই দলের নেতা হলেন শায়খ ইউসুফ সাকিক (রহ.)। তিনিই সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে আজান দেন। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানের যাত্রা শুরু। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে ম্যাকাসারের শায়খ ইউসুফ প্রথম ব্যক্তি যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কোরআন চালু করেছিলেন।এরপর বহু দেশের বহু মুসলিম অভিবাসী এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে মুসলমানরা ছিলেন সামনের সারিতে। সংখ্যায় মাত্র তিন শতাংশ হলেও আন্দোলনের ১০ শতাংশ নেতা ছিলেন মুসলমান। বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে রোবেন দ্বীপে অনেক মুসলিম নেতা কারাবরণ করেছিলেন। ইউসুফ দাদু, আহমাদ তামুল, আজিজ বাহাদ, আহমাদ কাসরাদা, ইমাম আবদুল্লাহ হারুন ও আহমাদ তাইমুল এমনই কিছু মহান সংগ্রামী। শেষোক্ত দুজন বর্ণবাদী স্বৈরাচার সরকারের রাষ্ট্রীয় খুনের শিকার হয়েছেন। পরে বর্ণবাদবিরোধী নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হলে মুসলমানদের দারুণভাবে মূল্যায়ন করা হয়। ১৯৯৪ সালের প্রথম জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারে চারজন মুসলমান মন্ত্রী স্থান পান। বিদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ১৫ জন মুসলমান শিক্ষানবিশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব লাভ করেন। সংগ্রামী মুসলিম নেতাদের নামে অনেকগুলো জাতীয় সড়কের নামকরণ করা হয়।১৯৯৪ সালের এপ্রিলে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দুটি মুসলিম দল আত্নপ্রকাশ করে। আফ্রিকা মুসলিম পার্টি (এএমপি) এবং ইসলামিক পার্টি। এএমপি জাতীয় সংসদ পাশাপাশি প্রাদেশিক আইনসভা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধুমাত্র পশ্চিম কেপ প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কোনও দলই বিধানসভায় কোনও আসনই অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে কোনও ইসলামী দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।২০০৪ সালের নির্বাচনগুলি এএমপি এবং পিস অ্যান্ড জাস্টিস কংগ্রেস পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সফল হয়েছিল।আল জামা-আহ ২০০৭ সালে গঠিত হয়েছিল এবং ২০১৯ সালে এটির প্রথম আসনটি জিতেছিল, এটিই প্রথম ইসলাম-অনুমোদিত দল হয়ে ওঠে।জোহানেসবার্গ, কেপটাউন আর ডারবান নগরীতে রয়েছে মুসলিম মালিকানাধীন ও টিভি স্যাটেলাইটের রেডিও টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয়। ডেইলি মুসলিম নিউজ, আল-কলম পত্রিকাসহ দৈনিক ডজনখানেক পত্রিকা প্রকাশিত হয় মুসলমানদের সম্পাদনায়। অনলাইন মিডিয়ায় ও মুসলমানরা অনেক এগিয়ে। আল-বারাকাহ, এইচবিজেড (ঐইত) ও হাবিব ব্যাংক মুসলিম মালিকানাধীন ব্যাংক।
১৯৪৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (Muslim Judicial Council -MJC) সর্বস্তরের মুসলমানদের নিয়ে সংগঠিত আল-মাজলিসুল ইসলামি দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের জাতীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। অন্য একটি সংগঠন দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস কাউন্সিল ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। ট্রান্সওয়ালের জমিয়ত উল-উলামা ( ১৯২৩), দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম যুব আন্দোলন (Muslim Youth Movement -MYM) এর মতো সংগঠনগুলি মুসলিমদের ন্যায্য ও আর্থিক সহায়তার উপভোগ করেছে তাদের সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের জন্য । একসময় শক্তিশালী মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ দক্ষিণ আফ্রিকা ( Muslim Students Association -MSA), যার বহু শাখা-প্রশাখা ক্যাম্পাসে ছিল, কম সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং ফলে ছাত্রদের কর্মকাণ্ডের উপর তার অবস্থান হারাতে থাকে। এছাড়াও একটি তুর্কি স্কুল নিজামিয়ে মুসলিম স্কুল রয়েছে যা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আউয়াল মসজিদ
আউয়াল মসজিদ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপটাউন শহরের বো-ক্যাপে ১৭৯৪ সালে নির্মিত হয়। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত। টুয়ানগুরু নামে পরিচিত কাজী আবদুস সালাম মসজিদটির প্রথম ইমাম নিযুক্ত হন। টুয়ানগুরু একজন ধর্মীয় নেতা, যিনি রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তিনি স্মৃতি থেকে পুরো কোরআন লিখেছিলেন। আউয়াল মসজিদে সেই কোরআন আজও আছে। প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদ এখনো সেই অবকাঠামোতেই রয়েছে, যে অবকাঠামোতে নিবেদিতপ্রাণ নির্মাতারা তা নির্মাণ করেছিলেন। মেহরাব এখনো আগের অবস্থায়ই আছে। ক্যাপটাউন এখন অনেক উন্নত শহর। কিন্তু মসজিদটি আগের সেই সাদামাটা অবস্থায়ই আছে। মসজিদ নির্মাণের পর যিনি ওই মসজিদে প্রথম ইমামতি করেছিলেন, আজও তাঁর বংশ থেকেই ইমাম নিযুক্ত করা হয়। এই মসজিদের সামনে একটি খেজুরগাছ আছে। এটি সে সময়ের ইমাম সাহেব হজে গিয়ে মদিনা থেকে এনেছিলেন। গাছটি এখনো তাঁর স্মৃতি বহন করে।বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ৫০০ মসজিদ, ৩০টি ইসলামিক সেন্টার ও ৮৫টি বিভিন্ন ধরনের ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও প্রায় মসজিদেই রয়েছে ইসলামি বিষয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা।প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মাদ্রাসা, বিশেষায়িত ইসলামি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইসলামি স্টাডিজ বিভাগগুলো ইসলামি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই আবার দেশসেরা প্রতিষ্ঠান।
শরিয়াভিত্তিক মুসলিম পরিবার আইনকে সরকারিভাবে স্বীকার করা হয়েছে। দেশটির সংবিধান সব নাগরিককে নিরুপদ্রবে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে।দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সংখ্যালঘু মুসলমান বলা যায়। তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় এতটা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন, যা অনেক মুসলিম দেশেও কল্পনা করা যায় না। মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক প্রভাব আর অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা সব মিলিয়ে দেশটিকে ইসলামি দাওয়াহর উর্বরভূমি বলা যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সব অঞ্চল মুসলিমপ্রধান না হওয়ায় সেখানে নিজেদের ধর্ম পালন করার সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কোনো কোনো এলাকা এমনও আছে, যেখানে স্থানীয় মুসলিম নাগরিক মোটেই নেই। ফলে সেখানে মসজিদের সংখ্যাও কম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তৃপ্তিসহকারে আদায় করার জন্য নেই কোনো মসজিদ। পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করার জন্য যেতে হয় অনেক দূরে।তাই বিভিন্ন বাসা বা গ্যারাজ ভাড়া করে সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করে প্রবাসীরা। এভাবেই চলে আসছিল বাঙালি প্রবাসীদের মসজিদ ‘মসজিদে আকসা’র কার্যক্রম। এবার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বাঙালিদের উদ্যোগে সেখানে জমি কিনে তৈরি করা হচ্ছে নতুন মসজিদ, যার নাম থাকবে ‘আল আকসা’ মসজিদ।এরই মধ্যে মসজিদটি নির্মাণের জন্য একজন প্রবাসী বাঙালির অর্থায়নে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের রাজধানী শহর মাফেকিংয়ের ইটসোসেং টাউনে জমি কেনা হয়েছে। শুরু করা হয়েছে ৮৫০ বর্গফুটের একটি মসজিদের নির্মাণকাজ, যা শেষ করতে খরচ হবে আনুমানিক ১.৫ মিলিয়ন আফ্রিকান র‌্যান্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ লাখ টাকা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল