সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আর্মেনিয়া পূর্ব ইউরোপের আরেক দখলদার ইসরায়েল

















মো.আবু রায়হানঃ পূর্ব ইউরোপে দক্ষিণ ককেশাসের বিরোধপূর্ণ এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে হঠাৎ করে শুরু হয়ে যাওয়া এই যুদ্ধে বড় বড় কামান, ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যে অঞ্চলের জন্য লড়াই চলছে সেই নাগোর্নো-কারাবাখের জন-অধ্যুষিত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের পর সেখানে এই প্রথম এধরনের হামলার ঘটনা ঘটলো। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বেসামরিক এলাকাতেও হামলা চালানো হয়েছে,সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত শতাধিক বেসামরিক নাগরিক এবং আর্মেনিয়ার বেশ কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে ।এই অঞ্চল নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও থেকে থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সামরিক সংঘাতও হয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবই ছিল সীমিত পরিসরে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে তিন শতাধিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে তাহলে তাতে বাইরের আরো অনেক শক্তি জড়িয়ে পড়বে যার ফলে আরো বৃহত্তর পরিসরে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যের বর্তমান লড়াই প্রায় ত্রিশ বছর ধরে জিইয়ে রাখা সমস্যার ফল। আজারবাইজানের আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০বর্গকিলোমিটার এবং প্রায় ৯৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ মানুষের বাস।আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী।৯৫% লোক জাতিগতভাবে আজারবাইজানি। এখানে মূলত শিয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী আজেরি জাতির লোকদের বাস।আর্মেনিয়া ১১,৪৮০ বর্গমাইলের ছোট্ট একটি দেশ।২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা প্রয় ৩০ লাখ ১৮ হাজার। খ্রিস্টানধর্ম, প্রায় ৯৫% অধিবাসীর ধর্ম। যিশুর দুই শিষ্য বার্থেলেমিউ ও থাদেউস প্রথম শতকেই এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন।ইতিহাসে আর্মেনিয়া প্রথম দেশ যারা খিস্টান ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেছিল।এখানকার শতকরা ৯০ ভাগ লোক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী । স্বল্পসংখ্যক ইহুদি, ইয়াজিদি ও মুসলমান অধিবাসী বসবাস করেন।

নাগোর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ।নাগোর্নো-কারাবাখ ককেশাস পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বিস্তৃত উচ্চভূমি।নাগর্নো-কারাবাখ ছিটমহলটির মোট আয়তন৪,৪০০ বর্গকিলোমিটার।ছিটমহলটির বাসিন্দাদের শতকরা ৯০ ভাগ জাতিগত আর্মেনীয়।নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সমস্যা শুরু হয় উসমানীয় সম্রাজ্য পতনের পরে যখন এ অঞ্চলটি ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে এ অঞ্চল চলে যায় বলশেভিকদের অধীনে।১৯২৩ সালে তত্কালীন সোভিয়েত শাসক জোসেফ স্ট্যালিন একে আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে আজারবাইজানের সঙ্গে জুড়ে দেন। নাম দেওয়া হয় নাগোর্নো-কারাবাখ অটোনোমাস ওব্লাস্ট (এনকেএও)।আর্মেনিয়ান সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক ইস্যুটি এরপর দীর্ঘ সময় অমীমাংসিত অবস্থায় পড়ে থাকে।আজারবাইজানের ভূসীমার মধ্য থেকে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্মেনীয়দের নেতৃত্বে স্বায়ত্বশাসন দিয়ে দেয় রাশিয়া। তখন থেকেই আজারবাইজান বিরোধিতা করে আসছে।১৯৯১ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মধ্য এশিয়ার অনেক প্রজাতন্ত্রের মতো স্বাধীনতা ঘোষণা করে নাগোর্নো-কারাবাখ । শুরু হয়ে যায় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পক্ষে থাকে কারাবাখ ও আর্মেনিয়া অন্যদিকে আজারবাইজান। যুদ্ধের পর কারাবাখ কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা ভোগ করছে, যদিও এই স্বাধীনতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। কারাবাখ এখনো আজারবাইজানের আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে রয়েছে কিন্তু ছিটমহলটির ওপর আজারবাইজানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আর্মেনিয়া আজারবাইজান স্বাধীন হয়।আজারবাইজানের তুলনামূলক কম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার ইন্ধনে আর্মেনীয়রা ধীরে ধীরে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের আশে পাশের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এ নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে বিরোধে জড়িয়ে আছে দুই প্রতিবেশী। আর্মেনিয়া ১৯৯২-৯৪ সালে যখন এই নাগোর্নো-কারাবাখ দখল করে নেয় তখন সেখান থেকে প্রায় দশ লাখ আজেরি উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল। তিন বছরের যুদ্ধে ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।তখন থেকে প্রতি যুদ্ধে আর্মেনিয়া আজারবাইজানের একটু একটু করে ভূমি দখল করতে থাকে। এখনও নাগোর্নো-কারাবাখ ও আরও ৭টি আজারবাইজানি জেলা আর্মেনীয়দের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে।এতে আর্মেনিয়া আজারবাইজানের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে আছে। এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ৪-৫ টি রিসোলিউশন পাশ করেছে। আর্মেনিয়ার দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং দখল করা সকল ভূখণ্ডকে আজারবাইজানের কাছে হস্তান্তর করতে বলেছে। কিন্তু বিশ্বের আরো অনেক মুসলিম জনপদের মতো আজারবাইজানের ক্ষেত্রেও জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা করেনি আর্মেনিয়া।এ লড়াই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আজারবাইজানের ভূমি অবৈধভাবে দখলকারী আর্মেনীয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আজারবাইজানীদের অধিকার আদায়ের লড়াই। এযেন পূর্ব ইউরোপের আরেক দখলদার ইসরায়েল এই আর্মেনিয়া। ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রদান করে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়। ১৯৪৯ সালে ইসরাইল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলের আয়তন ২০ হাজার ৭৭০ বর্গকিলোমিটার হলেও ইসরাইলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ নম্বর প্রস্তাবে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও বাইতুল মোকাদ্দাস তথা জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হলেও ইসরাইল জবরদখল করে রেখেছে।দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েল এখন একটি স্বীকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র যদিও এর স্বীকৃত কোন সীমানা নেই।
এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুটো দেশের মধ্যে গত কয়েক দশকে বারবার কূটনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, হুমকি দেওয়া হয় একে অপরকে আক্রমণের।আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের, কিন্তু এটি পরিচালনা করে জাতিগত আর্মেনীয়রা। দুটো দেশই এই এলাকাটিকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।ব্রাসেলস-ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বা আইসিজি বলছে, ২০১১ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ শান্তি আলোচনা থেমে যাওয়ার পর দুটো দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি একে অপরকে আক্রমণ করার হুমকিও বেড়েছে। দীর্ঘদিনের উত্তেজনার জের ধরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের আন্তর্জাতিক সীমান্তের উত্তরাঞ্চলে সামরিক সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু সেসব উত্তেজনা ও সংঘর্ষ এবারের মতো এতোটা তীব্র ছিলো না।সাম্প্রতিক এই যুদ্ধ কেন শুরু হলো তার কারণ খুব একটা পরিষ্কার নয়। তবে প্রকাশিত খবরা-খবর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আজারবাইজানের বাহিনী বিস্তৃত এই এলাকাটি পুনর্দখল করতে গেলে সবশেষ এই যুদ্ধের সূত্রপাত।
পশ্চিমা বিশ্ব এই লড়াই নিয়ে আছে দোটানায়। ইউরোপ এবং আমেরিকাতে আর্মেনীয় লবি অনেক শক্তিশালী; কিন্তু এই যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পাশে আছে পশ্চিমা শত্রু রাশিয়া। অন্যদিকে আজারবাইজান একটি মুসলিম দেশ এবং এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে আরেক মুসলিম দেশ তুরস্কের। সুতরাং, আমেরিকা, ইউরোপ বা ন্যাটোর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো দেশের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি না দিয়ে বরং উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আসতে বলা হয়েছে।ভৌগোলিক কৌশলগত কারণে আজারবাইজান তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। একারণে তুরস্ক বহু আগে থেকেই আজারবাইজানকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। আজারবাইজানের সঙ্গে এমনিতেই তুরস্কের জাতিগত মিল এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক এবং আজারবাইজানকে বলা হয় দুই রাষ্ট্র এক জাতি।তুরস্ক এ দেশটিকে প্রকৃতপক্ষেই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। এছাড়াও দেশটি এখন তুরস্কে প্রধান গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ।অন্যদিকে আর্মেনিয়ার সঙ্গে বৈরীতাও ঐতিহাসিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্মেনীয়রা উসমানী সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে উভয় পক্ষের লাখ লাখ লোক মারা যায়। আর্মেনীয় ডিয়াস্পোরা সেই ঘটনাকে পুঁজি করে পশ্চিমা দেশগুলোতে তুরস্কের বিরুদ্ধে তথাকথিত গণহত্যার স্বীকৃতি নিতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি দুদেশের সম্পর্ককে এতটাই তিক্ত করছে যে আঙ্কারা বারবার চেষ্টা করেও এটিকে মিষ্টি সম্পর্কে উন্নীত করতে পারেনি।আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে জুলাই মাসের সংঘর্ষের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজারবাইজানের সামরিক কর্মকর্তাদের যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।এর পর দুটো দেশ মিলে যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়েছে।এবারের সংঘাত শুরু হওয়ার পর আজারবাইজানের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, আজারবাইজানকে তারা সব ধরনের সহায়তা দেবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধে যে তুরস্কের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে এবিষয়ে তেমন একটা সন্দেহ নেই।আজারবাইজানের প্রতি আঙ্কারার এই অকুণ্ঠ সমর্থনের নিন্দা করেছে আর্মেনিয়া। তারা বলেছে, এর ফলে সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।রাশিয়া সেই সোভিয়েত আমল থেকেই আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার ওপর খবরদারি করে আসছে। দুইও দেশের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দহরম মহরম। তবে রাশিয়া সবসময়ই আর্মেনিয়াকে আরো বেশি সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে।আর্মেনিয়ার সাথে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। সেদেশে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তাজনিত সংস্থা কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে মস্কো আর্মেনিয়াকে নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। কিন্তু এসব সম্পর্ক ও সহযোগিতা রাশিয়াকে নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে জড়ানোর সুযোগ করে দেয়নি। কারণ এই এলাকাটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া- উভয়পক্ষের কাছেই অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। আজারবাইজানের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো।গত সপ্তাহে সংঘাত শুরু হওয়ার পর রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছে এবং যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে সংলাপ আয়োজনেরও প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্ককে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতারা সংযম প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে বলেছেন আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন করার কথা। ইরান, জর্জিয়া এবং কাতার এতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সবশেষ প্রস্তাবটি এসেছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২৯শে সেপ্টেম্বর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এবিষয়ে মধ্যস্থতা করবে মিনস্ক গ্রুপ যাতে সভাপতিত্ব করছে ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা ওএসসিই।
আর্মেনিয়া সরকারিভাবে নাগার্নো কারাবাখ প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাদের সব ধরনের সহায়তা আর্মেনিয়া দিয়ে থাকে। রাাশিয়াও নিজের স্বার্থে স্বঘোষিত কারাবাখ প্রজাতন্ত্রকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এখানকার সমস্যা ভূখণ্ড সম্পর্কিত ও জাতিগত। এখানকার লোকজন বেশির ভাগ আর্মেনীয় ভাষায় কথা বলে। তবে বিভিন্ন হিসাবে পুরো এলাকাটি আজারবাইজানের এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। তাই আজারবাইজান এলাকাটি দাবি করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আর্মেনিয়া আজারবাইজানের অখণ্ডতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। যুদ্ধবিরতির কারণে যুদ্ধ বন্ধ থাকলেও মাঝে মধ্যে তা বিস্ফোরণোম্মুখ হয়ে ওঠে। প্রায় পাঁচ লাখ আর্মেনীয় আজারবাইজানে বসবাস করছে। এদের অনেকেই উদ্বাস্তু। যদি আর্মেনিয়ার সাথে আবারো বড় ধরনের যুদ্ধ হয়, তবে এদের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটতে পারে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...