সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গরুর চামড়া খাওয়া কী হালাল ? কীভাবে খাবেন ?


ইসলামের দৃষ্টিতে গরু-ছাগলের চামড়া খাওয়া হালাল। হালাল পশুর ৭টি অঙ্গ খাওয়া হারাম।সেই ৭টির মধ্যে চামড়া উল্লেখ নেই। যে ৭টি অঙ্গ হারাম সেগুলো হলো প্রবাহিত রক্ত, নর প্রাণীর পুং লি’ঙ্গ, অন্ডকোষ, মাদী প্রাণীর স্ত্রী লি’ঙ্গ, মাংসগ্রন্থি, মুত্রথলি, পিত্ত।সুতরাং, যবহকৃত হালাল পশুর প্রবাহিত রক্ত ব্যতীত সবই হালাল (সুরা আনআম -১৪৫)।যেহেতু ইসলাম ধর্ম মতে কোরবানীর চামড়া খাওয়া নিষিদ্ধ নয় সেহেতু এটি খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। হানাফী কিতাব সমূহে আরো ছয়টি বস্ত্ত হারাম বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু সেগুলি সব ক্বিয়াসী বা অনুমান নির্ভর। সুতরাং হালাল পশুর চামড়া যদি কেউ খেতে চায়, খেতে পারে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সবকিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রাসূল (সা) বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো না (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; সহীহাহ হা/২৫০)।
রন্ধনশৈলী -হাঁস মুরগি ইত্যাদি প্রাণীর চামড়ার মত গরুর চামড়া রান্না করে খাওয়া যায়। তবে খাবারটি এখনো আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। গরুর চামড়া রান্না কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়। খুব সহজেই এটি রান্না করা যায়। চামড়ার রন্ধন প্রক্রিয়াও অনেক সহজ।প্রথমে গরুর চামড়াটি এক বর্গফুট আকারে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। এরপর ৩০মিনিট গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর মেঝেতে কোনো কিছুর উপর রেখে চামড়ার উপরের অংশে গরম পানি ঢেলে সাথে সাথে চামচ দিয়ে আঁচড় দিলে উপরের পশমগুলো উঠে যাবে। এবার এটি ছোট ছোট টুকরা করে নিন।ভালোভাবে ধুয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে।সিদ্ধ হলে, এই ছোট ছোট টুকরাগুলো গরুর মাংসের সাধারণ রেসিপির মত রান্না করুন। একটি চামড়ায় ১০ থেকে ১৫ কেজি কিংবা এর থেকে বেশি পরিমাণ গোশত পাওয়া যায়।
এছাড়া চামড়া দিয়ে হালিম, চটপটি ইত্যাদি রান্না করলেও তা মজাদার হয়। আর গরম চামড়া দিয়ে ভাত ও রুটি খাওয়া আরো মজাদার। যারা চামড়া খান, তাদের বক্তব্য হলো, একেক পশুর চামড়ার একের রকম স্বাদ।গরুর চামড়ায় কোলেজেনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে, তাই গরুর চামড়া বেশি উপদেয়। উপরের পশমী অংশটা (বা চাইলে শক্ত অংশটাও) যদি ফেলে দেয়া যায়, তবে ভেতরে কোলাজেন নামক প্রোটিন পাওয়া সম্ভব, যা মাংশের মতই খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য। আফ্রিকার অনেক রাষ্ট্রে গরুর চামড়া দিয়ে অনেক স্পেশাল আইটেম রান্না করা হয়, সেগুলো দেশ-বিদেশে প্রসিদ্ধ।মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়াতে মুসলমানরা পশুর চামড়া খায়।বহু বছর আগ থেকেই পটুয়াখালীসহ অনেক এলাকায় গরুর মাথার চামড়া রান্না করে খাওয়া হয়। বিশেষ করে গরুর পায়া (পা) এর সাথে মাথার চামড়াও রান্না করা হয়। মাথার চামড়া মোটা হওয়ায় এটির ভিন্ন চাহিদা আছে।
যদি চামড়া খাওয়ার সিস্টেমটাকে আত্মস্থ করা যায়, তাহলে বাসা-বাড়ী ও মাদরাসার বোর্ডিং/ হোস্টেলগুলোতে অনেকদিনের তরকারীর সুন্দর ব্যবস্থা হতে পারে। সেই সাথে দেশের একটি সম্পদ নষ্ট হওয়ার হাত থেকেও বাঁচতে পারে।লক্ষনীয়, ইসলাম ধর্মের নিয়ম হচ্ছে- কোরবানীর পশুর সবকিছু কোরবানীকারী ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যদি অংশ বিক্রি করে, তবে বিক্রির টাকা ব্যবহার করতে পারবে না, সেটা গরীবের হক্ব হবে।কুরবানীর পশুর চামড়ার দাম কম হওয়ায় তা গরীবেরা ক্রয় করে তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে আবার চামড়ায় প্রাপ্ত অর্থ গরীবদের মাঝে দান করা যেতে পারে।

গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...