হযরত ইদরীস (আ.) একজন প্রথম বিজ্ঞানী নবি


মো. আবু রায়হানঃ ইদরীস (আ.) যিনি ইসলামের ইতিহাস অনুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত দ্বিতীয় নবি। পৃথিবীর প্রাথমিকপর্যায়ের মানুষ হিসেবে তিনিই ছিলেন ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত ব্যক্তি।মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে তিনি ইসলামের প্রথম নবি আদম -এর পর নবয়ুত লাভ করেন।রাসুল (সা) মিরাজের রাতে চতুর্থ আসমানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যখন আমাকে আকাশে উঠানো হয়েছিল মিরাজের রাত্ৰিতে আমি ইদরীসকে চতুর্থ আসমানে দেখেছি।’ (তিরমিযী- ৩১৫৭)।তাঁর জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তিনি ইরাকের বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কারো মতে তিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, বাইবেলে উল্লেখিত 'ইনোখ' (Enoch) ব্যক্তিটি হযরত ইদরীস (আ.)।হযরত ইদরীস (আ.) হযরত নুহ (আ.)-এর পূর্বের নবি ছিলেন,না পরের নবি ছিলেন এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইতিহাসবিদ এবং তাফসিরকার তাকে ইসলামের তৃতীয় নবি এবং হযরত আদম (আ.)এর তৃতীয় প্রজন্ম বলে মত প্রকাশ করেছেন।কারো মতে তিনি ছিলেন হযরত আদম (আ.)’র সপ্তম অধস্তন পুরুষ ও হযরত নুহ (আ.)’র পরদাদা।ইবনে ইসহাকের মতে, হযরত ইদরীস (আ.) হলেন ইসলামের নবী নূহ এর দাদা। তাঁর আসল নাম হলো আখনূখ।ইদরীস তাঁর উপাধি। কিংবা আরবি ভাষায় তাঁর নাম ইদ্রীস আর হিব্রু ও সুরইয়ানী ভাষায় তাঁর নাম হলো আখনূখ।আল্লাহ তাকেঁ নুবুওয়্যত দান করেন। তিনি পূর্ববর্তী নবী হযরত আদম ও হযরত শীস (আ.) এর শরিয়ত মেনে চলার জন্য লোকদের আদেশ করলেন। কিন্তু কিছু লোক ছাড়া কেউ-ই তাঁর কথা মানলো না। অল্পকিছু লোক তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে সৎপথে ফিরে আসলো। আর অধিকাংশ মানুষই তাঁর বিরোধিতা করলো। তাই তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে মনস্থ করলেন। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা মাতৃভূমি ছাড়তে গড়িমসি করে বললো, বাবেলের মতো দেশ ছেড়ে গেলে এমন দেশ আর কোথায় পাব? উত্তরে তিনি বললেন, যদি আমরা আল্লহর জন্য হিজরত করি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে এরচেয়ে উত্তম প্রতিদান দেবেন। এরপর তিনি নিজের অনুসারীদেরসহ দেশ ছেড়ে রওয়ানা হলেন এবং একসময় মিশরের নীলনদের তীরে এসে পৌঁছলেন। এ জায়গা দেখে তারা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং এখানেই বসবাস করতে লাগলেন। তিনি সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধে তৎপর হন।
মানবজাতিকে ইদরীস (আ.) প্রথম কাপড় বুনন ও পোশাক সেলাইয়ের কৌশল শিখিয়েছিলেন। তাঁর আগে মানুষ জন্তু বা পশুর চামড়া ব্যবহার করত পোশাক হিসেবে। তিনি প্রথম লিখনের প্রবর্তন এবং কলমের ব্যবহার করেন।তিনিই সর্ব প্রথম সংখ্যার গণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।ইদরীস (আ.) হলেন প্রথম মানব, যাঁকে মুজেযা হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অংকবিজ্ঞান দান করা হয়েছিল। তিনি গ্রহ-উপগ্রহের চলাফেরা বা গতিবিধি লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণ করার জন্য বেশ কিছু মান-মন্দির নির্মাণ করেছিলেন বলেও জানা যায়। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন এবং লোহা দ্বারা অস্ত্র-শস্ত্র তৈরীর পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়। তিনি অস্ত্র নির্মাণ করে কাবিল গোত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ করেন। সর্বপ্রথম এসব নির্মাণগত উৎকর্ষ সাধনের কারণে তাকে ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে। তাঁর যুগে ৭২টি ভাষা ছিল এবং এর সবকটি ভাষাই তিনি বলতে পারতেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল