ইতালির চেয়ে বড় ভুল করে আমরা কিভাবে নির্ভয়ে?

 

মো.আবু রায়হান :ইতালির মিলান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের কডোনো শহরের করোনা সংক্রমিত এক বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তির পর পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে করোনা ভাইরাস ওই হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পুরো ইতালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে এবং মহামারির আকার ধারণ করেছে।
ইতালির বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ স্থগিত করার আগে থেকেই চীন বা করোনা আক্রান্ত অন্য যেকোনো দেশ থেকে কেউ এলে তাদের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখার এবং চিকিৎসাকর্মীদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।চীনের হুবেই প্রদেশের দুজন পর্যটক ২৩ জানুয়ারি ইতালির মিলান বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের কিছুদিন পরই রোমে গিয়ে অসুস্থ হন। তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে ইতালিতে ফেরেন এক ইতালীয় নাগরিক। দৃশ্যত ওই তিনজনই ইতালির প্রথম করোনা রোগী। করোনাভাইরাসে ইতালিতে প্রথম মৃত্যু হয়েছে  ২২ ফেব্রুয়ারি। এই এক ভুলে  ইতালি করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল ও মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হয়েছে।করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পরই ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিই প্রথম চীনের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালির বিমানবন্দর গুলোতেই সে সময় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় থার্মাল ক্যামেরা বসানো হয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রী, এমপি নেতাদের মতো দাবি করেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে ইতালির নেওয়া ব্যবস্থা পুরো ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।এরপরে পরিসংখ্যান কি বলে? গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে  ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ইতালিতে মোট মারা গেছে ৬ হাজার ৭৭ জন। 
জাতির উদ্দেশ্যে  ভাষণে ইতালির প্রধানমন্ত্রী এখন অনেকটা নরম ও অসহায়। তিনি বলেছেন, 'আমরা মহামারীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি। আর কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে।' ইতালির জনগণের সারি সারি লাশের স্তুপ, দুর্দশা ও অসহায়ত্বের যেন অন্ত নেই। 
এদিকে বাংলাদেশের পুলিশের হিসাবে মার্চের প্রথম ২০ দিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার প্রবাসী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এসেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলো থেকে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই তারা যার যার বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ হাজার বিদেশফেরত স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে আছেন। অন্যদের কোনো হদিস নেই।এখান থেকেই আমাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কারণ। 
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যুতসই ছিল।কিন্তু ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণে তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশের নেতা নেত্রীর মুখে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা মিথ্যা আস্ফালন ছাড়া আর কি হতে পারে। ইতালির  আয়তনের অর্ধেক বাংলাদেশ। জনসংখ্যায় বাংলাদেশ ইতালির চেয়ে তিনগুণের কাছাকাছি। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ।সব সমীকরণে পিছিয়ে থেকেও আমরা আবার বড়াই করি। নিজেদের করোনার চেয়ে শক্তিশালী জ্ঞান করি। কথায় বলে হাতি ঘোড়া হলো তল, ভেড়া বলে কত জল। ইতালি যে ভুল করে খেসারত দিচ্ছে আমরা ইতোমধ্যে সে ভুল করে বসেছি। এ সপ্তাহের মধ্যে হয়তো আঁচ করবো করোনার বিধ্বংসী কিংবা নির্লিপ্ত চেহারা। সেক্ষেত্রে আল্লাহকে ডাকা এবং জীবনের সব চাওয়া পাওয়াকে উপেক্ষা করে নির্ভয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন ব্যতীত উপায় থাকবে না। ইতালি তাদের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়েও যেখানে কুলে উঠতে পারছে না। সেখানে আমাদের কি আছে? কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল