ওদের ঘরেও একটু ঈদ আসুক
এবার ঈদের আগে দুটো খবর সবার হৃদয়কে গভীর ভাবে স্পর্শ করেছে। ধনী গরীব সবার জন্য ইদের আনন্দ যে সমান। সবাই সমভাবে যে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারি। তার উত্তম উদাহরণ হতে পারে ঈশ্বরদীর আসিফ ও নেত্রকোনার মাসুদের সাথে আমাদের ইদের আনন্দটা ভাগাভাগি। এখনো আসিফের পাশে সুহৃদ কেউ দাঁড়ায়নি। সবেমাত্র আসিফের কষ্টের অভিব্যক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত। দিনশেষে কোনো মানবিক হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি অবশ্যই আসিফের পাশে দাঁড়াবেন। ওদের ঈদের আনন্দ উপভোগ তৈরীর অবলম্বন হবেন ইনশাআল্লাহ। এভাবেই আমরা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে অভাবী হতদরিদ্র মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি।
আসিফকে নিয়ে পত্রিকার সংবাদ থেকে জানতে পারি। কোনোমতে দু’বেলা দুমুঠো খেয়ে ওদের সংসার চলে।ঈদ উৎসবে সন্তানের একটু শখ আবদার পূরণ করাটা অনেক দরিদ্র বাবার জন্যই বোঝা। সেক্ষেত্রে অনেক পরিবারের সন্তানরা নিজেই দায়িত্ব তুলে নেয় নিজ কাধে। এমনি এক শিশু পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার আসিফ।
আসিফ ঈশ্বরদীর মাজদিয়া মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলীর পুত্র । এলাকার একটি মাদ্রাসায় সে পড়াশোনা করে।হালকা-পাতলা গড়নের আসিফের আশা ঈদে সে একটি নতুন জামা তার বোনকে উপহার দেবে। সেজন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে একটি ঝুড়িতে কয়েকটি বাঙ্গি নিয়ে বসে আছে আসিফ।বাঙ্গি বিক্রি হলে তার ছোট বোনের জন্য একটি জামা কেনা হবে এই তার।গত শুক্রবার দুপুরে দরিদ্র কৃষক বাবার সন্তান আসিফকে দেখা যায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ওভারব্রিজ মোড়ে।এই প্রখর রোদে বাঙ্গি নিয়ে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে ছোট্ট আসিফ জানায়, ঈদে সবার বোন নতুন জামা পরে বের হয়। তার বোনের নতুন জামা নেই। তাই ছোট বোন ইতির জন্য নতুন জামা কেনার আশায় বাঙ্গি নিয়ে বিক্রি করতে এসেছে ।আসিফ জানায়, তারা দুই বোন,এক ভাই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোন ইতি নতুন জামার জন্য বায়না ধরেছে। তাই তার বায়না মেটাতে সকালে মাদ্রাসা ছুটির পর বাঙ্গি বিক্রি করতে এসেছি।
অন্যদিকে মাসুদকে নিয়ে যা জানা গেল। স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া শিশু মাসুদের আর কোনো পোশাক নেই। তাই সারাদিন কাটে তার স্কুল ইউনিফর্ম পরেই। মাসুদ এবার বায়না ধরেছে ঈদে নতুন পোশাক কিনবে। কিন্তু অভাবী বাবার সেই আবদার পুরণের সামর্থ্য নেই। তাই মাসুদ নিজেই বাড়ির একমাত্র রাজহাঁসটি নিয়ে হাজির হয়েছে স্থানীয় হাটে।সম্প্রতি শিশু মাসুদের উপস্থিতি মেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার গাংধরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাঁচকাঠা বাজারে। সেখানে বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরা দেখে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল হাঁস বিক্রির কারণ। মাসুদ কলমাকান্দা উপজেলার সন্ধ্যাওয়ালা গ্রামের গরীব কৃষক আলফত আলীর ছেলে। মাসুদ গাংধরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মাসুদের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকের কথা বলার কিছুক্ষণ পর বাজারে আসেন তার দাদা মঙ্গল আলী। তিনি জানান, ছোট মানুষ খুব বায়না ধরেছে ঈদে নতুন জামা তাকে কিনে দিতেই হবে। এক কাপড় পরেই চলাচল করতে হয় মাসুদকে। অভাবের সংসারে কারোও হাতেই ঈদ করার মতো টাকা নেই। শেষে উপায় না দেখে আবদার মেটাতে রাজহাঁসটি বিক্রি করতে বলে মাসুদের বাবা আমার ছেলে।
এই খবর প্রকাশিত হবার পর মাসুদকে আর অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিদিন। সোসাল মিডিয়ায় মাসুদের রাজহাঁস সহ ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা প্রশাসন মাসুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মাসুদের ঈদের আনন্দ ও ইচ্ছের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাসুদকে প্যান্ট, এক জোড়া চামড়ার জুতো, গেঞ্জি ও তার মাকে একটি সুতি কাপড় এবং নগদ দেড় হাজার টাকা ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। মাসুদের ঈদ আনন্দের ব্যবস্থা হলেও আসিফের কি ব্যবস্থা হয়, কে তার পাশে দাঁড়ায় সেটিই দেখার বিষয়। এরকম হাজারো আসিফ ও মাসুদ আমাদের আশেপাশে আছে। যারা একটুকরো নতুন জামা কাপড়ের কারণে বঞ্চিত হবে ঈদের আনন্দ থেকে। আমরা সাধ্য অনুযায়ী ওদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি। ওদের মুখে ফোটাতে পারি অকৃত্রিম হাসির ঝিলিক।এভাবে ঈদের আনন্দটা সমভাবে ভাগ করে নিই ওদের পাশে থেকে।শেষ করি কাজী নজরুল ইসলামের ঈদ -মোবারক কবিতার কিছু অংশ বিশেষ দিয়ে।
ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,
সুখ-দুখ সম-ভাগ করে নেব সকলে ভাই,
নাই অধিকার সঞ্চয়ের!
কারও আঁখি-জলে কারও ঝাড়ে কি রে জ্বলিবে দীপ?
দুজনার হবে বুলন্দ-নসিব, লাখে লাখে হবে বদনসিব?
এ নহে বিধান ইসলামের॥
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন