সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামে তওবার বিধান ও তওবার দরজা কখন বন্ধ হবে?

মো.আবু রায়হানঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর বান্দারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বিপথগামী হতে পারেন। বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হতে পারেন। তাদেরকে শোধরানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক তওবার বিধান রেখেছেন। তওবা শব্দটি আরবি অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা আল্লাহর পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়। তওবার পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা হয় নিজের অন্যায় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। তওবার জন্য করণীয় বিধান হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায় মনোযোগী হওয়া। কোরআনের সুরা তাহরিমের ৮ নম্বর আয়াতে তওবা শব্দটি ′নাসূহা শব্দ সহকারে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ খাঁটি। ‘হে ইমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবহমান।’ (সুরা- তাহরিম, আয়াত-৮)।
সুতরাং তওবার প্রকৃত তাৎপর্য হল আন্তরিক অনুশোচনা।মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলো কদাচিৎ তার দ্বারা পাপ কাজ সংগঠিত হলে সে তওবা না করা পর্যন্ত মানসিকভাবে প্রশান্তি পায় না। কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা তওবা। এছাড়া সূরা নুর, সূরা তাহরিম, সূরা বাকারা, সূরা ফুরকানসহ কুরআনের আরও অনেক স্থানে তওবা এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।তওবা সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২২২)। ‘(হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের সত্তার প্রতি সীমাহীন জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত- ৫৩)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘সকল আদম সন্তানই গুনাহগার, গুনাহগারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারীরা। (তিরমিজি, ইবনে মাজা, দারেমি)। তওবার সুফল সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী, বেগুনাহ ব্যক্তির মতো। (ইবনে মাজা, বায়হাকি)।তওবার ক্ষেত্রে শুধু মুখের এমন উচ্চারণ যথার্থ তওবা নয়। বিষয়টি অনেকেই জানেনও না। আর সে কারণেই দেখা যায়, পাপাচার অনেক মানুষের জীবনের সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বস্তুত শয়তানের প্রতারণায়, নফসের প্রবঞ্চনায় কিংবা পার্থিব মোহে কোনো মুসলমান দ্বারা পাপের কাজ হতেই পারে। তাই বলে পাপাচার কোনো মুসলমানের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। মানুষের কর্তব্য হলো, সে সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে তওবা করবে, যা সে করেছে। এ জন্য সব গুনাহের কাজ থেকে আলাদাভাবে হোক বা সম্মিলিতভাবে হোক তওবা করা অপরিহার্য।আলেমদের মতে অধিক গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়ে থাকলে একটি বা দুটি গুনাহের কাজ থেকে তওবা করলে সব গুনাহের কাজ থেকে তওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি গালি দেয়, ব্যভিচার করে, মদ্যপান করে। সে যদি গালি দেয় ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো গুনাহের কাজ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের গুনাহের কাজ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তওবার শর্তাবলি পালন করে সব গুনাহের কাজ থেকে এক সঙ্গে তওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।যদিও তওবার শর্ত হলো এ ধরনের সংঘটিত গোনাহের পুনরাবৃত্তি না হওয়া।
ইসলামি শরীয়ত মতে, বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। অবশ্য সেটা হতে হবে আন্তরিক। আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে যদি কোনো ব্যক্তি তার কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত না হয় বা তা পরিত্যাগের ইচ্ছা না করে, তহলে তার মৌখিক তওবা উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। মৌখিক তওবা প্রকৃত তওবা নয়। কোনো গুনাহের কাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো তা না করার দৃঢ় সংকল্প করাই প্রকৃত তওবা।আন্তরিক তওবার কিছু শর্ত রয়েছে। অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে তওবা পরিপূর্ণ হয়। ১. গোনাহ ত্যাগ করা। ২. কৃত গোনাহের ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া। ৩. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। বান্দার হক সংক্রান্ত গুনাহ হয়ে থাকলে বান্দার হক আদায় করতে হবে। গুনাহ করলেই শুধু তওবা করতে হবে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। বরং গুনাহ না করেও তওবা করা যায়। বলা হয় এটা অত্যন্ত উত্তম এক আমল। হযরত রাসূল (সা.) খুব বেশি বেশি তওবা করতেন; অথচ তাঁর জীবনে কোনো গুনাহ ছিল না।হযরত আলী (রা.) কে তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন তওবা হল ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি-
১.নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া,২.অনাদায়ী ফরয/ওয়াজিব ইবাদতসমূহ আদায় করা,৩.অন্যের সম্পত্তি/অধিকার নষ্ট করে থাকলে তা ফেরত দেয়া,৪.শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চওয়া, ৫.ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা এবং ৬.আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা।আল্লাহ পাক যাদের তওবা কবুল করেন না।
এক. যারা শিরকে লিপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ আল্লাহর শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।’ (সূরা আন নিসা, আায়াত-৪৮)।
দুই. যাদের মধ্যে মুনাফিকের দোষ বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা না করো, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সূরা আল মুনাফিকুন,আয়াত-৬)।
তিন. যারা সীমালঙ্ঘন করে। আল্লাহ পাক বলেন, 'যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না।’ (সূরা আন নিসা,আয়াত -১৬।
চার.যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরী করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।’ (সূরা মুহাম্মদ,আয়াত-৩৪)।
পাঁচ. ঈমান আনার পরও যারা বারংবার কুফরী করে। মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে।’ (অন্তরের ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের নাম ঈমান, মুনাফিকগণ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ‘ঈমান এনেছে’ বলে মুখে প্রকাশ করত, আবার সুযোগ সুবিধা পেলে সেটা অস্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করত না, আলোচ্য আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না। (সূরা আন নিসা,আয়াত-১৩৭)।
তওবা করার পর আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা সামান্যতম কমে না। তওবার শর্তসমূহ পূরণ করে তওবা করলে গুনাহ করার আগে আল্লাহর কাছে বান্দার যে মর্যাদা ছিল, তওবা করার পর তার মর্যদা পূর্বাপেক্ষা আরও বাড়ে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।’ -সূরা আন নূর, আয়াত- ৩১)।হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো উট বিরান মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পরে ফিরে পেলে সে যতটুকু খুশি হয় আল্লাহ তায়ালা তার কোনো বান্দা তওবা করলে তার থেকেও বেশি খুশি হন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
তওবা করার জন্য আসলে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা পন্থা নেই, যার দ্বারা তওবা করা যায়। তবে ‘আসতাগফিরুল্লাহ রাবি মিন কুল্লি জানবিউ ওয়াতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লা হিল আলিয়িল আজিম’ এটা বলে মূলত তওবা করা হয়। এছাড়াও কয়েকটি দোয়া পড়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “কেউ যদি ইখলাছের সাথে এই দোয়া পাঠ করে তাঁর গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও তা মাফ হয়ে যাবে- ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইইয়্যুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি।”(তিরমিজি, আবু দাউদ)।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার হলো, ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত’তু। আউযু বিকা মিন শাররি মা সনা’তু। আবু-উ লাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ বি-জাম্বি, ফাগফির লি, ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া আর কেউ ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনারই বান্দা, এবং আমি যথাসাধ্য আপনার নিকট প্রদত্ত অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর বহাল থাকবো। আমি যত অন্যায় করেছি, সেই সবকিছুর কুফল থেকে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। আমার ওপর আপনার যে অসংখ্য নেয়ামত রয়েছে, তার শোকর গুজারি করি এবং আমার গুনাহের স্বীকারও করছি; অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া গুনাহ সমূহকে ক্ষমাকারী আর কেউ নেই।তবে মনে মনে বিশুদ্ধ নিয়ত করলেই তওবা কার্যত হয়ে যাবে।
তাওবার দরজা কখন বন্ধ হবে তা নিয়েও কোরআন ও হাদিসে সুষ্পষ্ট ভাবে ঘোষণা রয়েছে।আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন লোকের জন্য কোনো ক্ষমা নেই যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারও মাথার ওপর মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।’ (সূরা নিসা, আয়াত -১৮)।হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, হযরত আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশয়ারি (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ পশ্চিম (আকাশ) দিক থেকে সূর্যোদয় (কেয়ামত) না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতে তার ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করতে থাকেন। যাতে রাতে গুনাহগার তওবা করে। (মুসলিম)।উপরিউক্ত কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওলামারা বলেছেন, আযাবের পূর্ব মুহুর্তে তওবা করা।আল্লাহ পাক বলেন, 'আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর। তার (আযাব আসার) পরে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।'(সুরা আল জুমার,আয়াত-৫৪)।উল্লিখিত আলোচনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে, তওবার গুরুত্ব অপরিসীম।তওবার মাধ্যমে আমরা নিজেদের নিষ্কলুষ ও পুত পবিত্র করতে পারি। আল্লাহ পাক আমাদের খালেছ দিলে তওবা করার তওফিক দিন। আমিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...